চালের বাজার উর্ধ্বমুখী। নিম্নআয়ের মানুষ এই উর্ধ্বমুখী চালের বাজারের কারণে পড়েছে দারুণ বিপদে। তাঁদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ গত মৌসুমে বোরো আবাদ ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাঠ থেকে শতভাগ আমন ধান উঠে গেছে। চালের সরকারি মজুদও যথেষ্ট। তার পরও বাজারে কমছে না চালের দাম, বরং উল্টো মিলগেট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েই চলেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে, মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিলেও খোলাবাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ করছেন না। ইচ্ছামতো সরবরাহ করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছেন। আবার এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাচ্ছেন দেশে চাল আমদানি হোক। এর জন্য দাম বাড়িয়ে বাজারে চাপ তৈরি করছেন।
গড়ে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন বা দেশের মোট চাহিদার ১৫ দিনের চাল মজুদ থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত সপ্তাহের হিসাবে সরকারি গুদামে ১৯.৭৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৬.০৯ লাখ মেট্রিক টন। তার পরও দাম কমছে না কেন? বিশ্লেষকদের ধারণা, বড় ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো বাজারে আসায় চালের মজুদদারি বেড়েছে। আবার সরকার ধানের চেয়ে চাল বেশি কেনায় মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এটি স্পষ্ট যে, প্রতিবছর ধানের মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকারের এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরাসরি কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। কৃষক যাতে কোনোভাবেই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতেই কৃষকের কাছ থেকে কেনা হয় ধান ও চাল। অন্যদিকে দেশের রাইস মিলগুলো থেকেও সরকার চাল কিনে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে রাইস মিলগুলোর চুক্তি সম্পাদিত হয়। সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে সরকারের খাদ্যগুদামে মিলগুলো চাল সরবরাহ করে থাকে। সরকার প্রয়োজনের সময় এই চাল খোলাবাজারে বিক্রি করে। তাতে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে অসাধু চালকল মালিকরা। তাঁরা অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুদ করার কারণেও চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে।