জিংকের অভাব শিশুর কোষ গঠন বাঁধাগ্রস্ত করে।
এতে দৈহিক বৃদ্ধি ও মেধার বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হয়। গর্ভবতী মায়ের জিংকের
অভাব হলে শারিরীক দূর্বলতা দেখা দেয় এবং গর্ভের বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পক্ষান্তরে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেলে ছেলেমেয়েরা খাটো হয়
না, দৈহিক বৃদ্ধি ও মেধার বিকাশ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ভাতের
মধ্যে জিংকের পরিমাণ অল্প থাকায় বায়োফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে জিংক ধান
উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা আমাদের জিংকের অভাবজনিত অপুষ্টি দুরীকরণে বিশেষ
ভুমিকা পালন করবে।
শেরপুরে সরকারি কর্মসূচিতে জিংক সমৃদ্ধ ধান সহ বায়োফটিফাইড ফসলাদির
কার্যকর অন্তর্ভুক্তির লক্ষে আয়োজিত এক অ্যাডভোকেসি সভায় এসব কথা জানান
কৃষি বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ
অ্যাডভোকেসি সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। পুষ্টি উন্নয়নে বিংগ্স (বাংলাদেশ
ইনিশিয়েটিভ টু এনহেন্স নিউট্রেশন সিকিউরিটি এ- গভর্ণেন্স) প্রকল্পর
আওতায় হার্ভেস্টপ্লাস বাংলাদেশ এ অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করে। সভায়
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ। কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শেরপুর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে’র
সভাপতিত্বে এতে সম্মানীত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হার্ভেস্টপ্লাস
বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. খায়রুল বাশার। সভায় মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন
করেন হার্ভেস্টপ্লাস বাংলাদেশ- এর সিনিয়র স্পেশালিস্ট ওয়াহিদুল আমিন। এতে
অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন হার্ভেস্টপ্লাসের ডেপুটি কান্ট্রি
ম্যানেজার ড. এমএ সালেক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্ল্যান্ট
ব্রিডিং বিভবাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল কাদের, সিভিল
সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আল ওয়াজিউর
রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুক্তাদিরুল আহমেদ, উন্নয়ন সংঘের
নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়কারি হাবিবুর রহমান
প্রমুখ। এ অ্যাডভোকেসি সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞানী, মাঠ
পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, জেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা,
চাতাল মালিক, কৃষক, সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ সহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিবর্গ অংশ
গ্রহণ করেন।
অ্যাডভোকেসি সভায় জানানো হয়, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ হলেও
পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি রয়েছে। তাই পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শেরপুর ও জামালপুর জেলার ৬টি উপজেলায় গত দেড়বছর
ধরে ব্লিংস প্রকল্পের আওতায় জিংক সমৃদ্ধ ধান উৎপাদন এবং ভোক্তা পর্যায়ে
বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে হার্ভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ। যাতে স্থানীয়ভাবে
উৎপাদিত ও সহজ প্রাপ্য খাদ্য উপাদান ব্যবহার করে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার
তৈরী করে নিজেরা খেতে পারেন।
এতে মারাত্মক অপুষ্টির শিকার শিশুদের পুষ্টির উন্নয়ন ঘটবে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। জিংক সমৃদ্ধ ব্রি উদ্ধাবিত ব্রি ধান-৭৪ এবং
ব্রি-ধান-৮৪ এবং বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান-২০ শেরপুরে কৃষক পর্যায়ে বেশ
জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এজন্য সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে জিংক সমৃদ্ধ ধান কেনা এবং
ভিজিডি-ভিজিএফ এবং কৃষি প্রণোদনায় জিংক সমৃদ্ধ ধান অন্তর্ভুক্ত করার
বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। গর্ভবতী মায়েরা যাতে কুসংস্কার মুক্ত হয়ে বেশী
বেশী খাবার গ্রহণ করতে পারেন, খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার
প্রদত্ত জিংক সমৃদ্ধ চাল যেন উপকারভোগীরা বিক্রি না করে নিজেরা খায় তার
দিকে দৃষ্টি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।করা হয়।