প্রায় শত বছর পূর্বে দেশত্যাগ করে ভারতে বসবাসরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নিঃসন্তান দম্পত্তি। দীর্ঘদিন পর সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য ওই নিঃসন্তান দম্পত্তির দুই পুত্র সন্তান রয়েছে দাবী করে মিথ্যে ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের পশ্চিম সাতলা গ্রামের। মিথ্যে ওয়ারিশ সনদ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা।
বুধবার সকালে সরেজমিনে পশ্চিম সাতলা গ্রামের মৃত ষস্টি সমদ্দারের ছেলে হেমান্ত সমদ্দার ও সুমান্ত সমদ্দার জানান, তাদের চাচাতো দাদা রতিকান্ত সমদ্দার প্রায় শত বছর পূর্বে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে বসবাসরত অবস্থায় ১৯৭৬ সালে নিঃসন্তান রতিকান্ত সমদ্দার মৃত্যুবরন করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে তার (রতি) স্ত্রীও মারা যায়।
তারা আরও জানান, রতিকান্ত সমদ্দারের ওয়ারিশ কিংবা আপন ভাই না থাকায় হিন্দু আইন অনুযায়ী তার (রতি) তিন একর সম্পত্তির ওয়ারিশ হন রতির আপন চাচাতো ভাই ষষ্টি সমদ্দার। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে ষষ্টি সমদ্দারের মৃত্যুর পর ওই সম্পত্তির ওয়ারিশ হন ষষ্টি সমদ্দারের পুত্র হেমান্ত ও সুমান্ত। সেই থেকে ওই সম্পত্তি তারা ভোগদখল করে আসছেন। এমনকি বিএস রেকর্ডেও ওই সম্পত্তি তাদের নামে রয়েছে।
তারা আরও জানান, অতিসম্প্রতি স্বরূপকাঠী এলাকার জনৈক ব্যক্তি জাল দলিল ও মিথ্যে ওয়ারিশ সনদপত্র দিয়ে ওই সম্পত্তি মিউটেশন করতে দিলে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে তাদের নোটিশ প্রদান করা হয়। এরপরই সাতলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মিথ্যে ওয়ারিশ সনদপত্র দেয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের ভয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও চেয়ারম্যানের দেওয়া ওয়ারিশ সনদপত্রটি সম্পূর্ন মিথ্যে বলে তারা দাবী করেন।
হেমান্ত সমদ্দার (৬৬) জনকণ্ঠকে বলেন, আমি অসংখ্যবার রতিকান্ত সমদ্দারের ভারতের বাসায় গিয়ে দীর্ঘদিন থেকেছি। তার কোন সন্তান থাকলে আমি তখনই জানতাম। তিনি (রতি) ছিলেন নিঃসন্তান। সেখানে ওই নিঃসন্তান দম্পত্তির মৃত্যুর পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া ওয়ারিশ সনদে দুই ছেলে কোথা থেকে আসলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সূত্রমতে, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাতলা ইউপি-৩৫২৯ নং স্মারকে ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার স্বাক্ষরিত ওয়ারিশ সনদপত্রে পশ্চিম সাতলা গ্রামের মৃত চরন সমদ্দারের ছেলে রতিকান্ত সমদ্দারের দুই ছেলে জীতেন্দ্রনাথ সমদ্দার ও রমেন চন্দ্র সমদ্দার নামের দুইজনকে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়ারিশ সনদপত্রটিতে ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্যর তদন্ত সাপেক্ষে ইস্যু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, উল্লিখিত নামে কোন ওয়ারিশের আবেদনে আমি সুপারিশ করিনি।
এ ব্যাপারে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, ওয়ারিশ সনদপত্রটি নিয়ে আপত্তি থাকলে অধিকতর তদন্ত করে মিথ্যে প্রমানিত হলে তা (ওয়ারিশ সনদপত্র) বাতিল করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হিন্দু নেতারা জনকণ্ঠকে বলেন, মিথ্যে ওয়ারিশ সনদপত্রের বিষয়টি সর্বত্র ছড়িয়ে পরলে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগীরা এ ব্যাপারে কারও কাছে মুখ না খোলার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের ভূক্তভোগীদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
তারা আরও বলেন, নৌকার ভোট ব্যাংকখ্যাত সাতলা ইউনিয়ন। এখানকার ইউপি চেয়ারম্যানের নেতিবাচক কর্মকা-ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার ভোট ব্যাংকে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ইউপি চেয়ারম্যানের আপত্তিকর কর্মকান্ডের তদন্ত করে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেছেন।