চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলিনগর স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসিন আলী। এই বয়সেই প্রতারণার ফাঁদ পেতে মিথ্যে সুনাম অর্জন করতে চেয়েছিলেন। বিধিবাম, সব ঠিকঠাকমতো এগোলেও তীরে এসে তরী ডুবে গেছে ইয়াসিন আলীর। কয়েক ঘণ্টা আগেও যে আলিনগর তথা গোটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গর্বে পরিণত হয়েছিলেন ইয়াসিন আলী, মুহূর্তের মধ্যে সে গর্ব ম্লান হয়ে এখন প্রতারকে পরিণত হয়েছে তিনি। তার এ প্রতারণায় লজ্জায় মাথা হেট হয়েছে মা-বাবা আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামবাসী এবং তাঁর স্কুলের।
প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষ ইয়াসিন আলীকে আলিনগর স্কুল ও কলেজ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিতও করা হয়েছে। ব্যাখ্যাও দিয়েছে এ বিষয়ে।
জানা গেছে, সার্কের ৮টি দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘করোনা এবং বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা বক্তা নির্বাচত হয়েছেন বলে প্রচারণা চালান ইয়াসিন আলী। ভারতের নয়াদিল্লির সার্ক ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২২ জন প্রতিযোগির মধ্যে তিনিই সেরা হন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বলেও প্রচারণা চালানো হয়। শুধু তাই নয়, এলাকার বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছাতেও সিক্ত হন ইয়াসিন আলী। এলাকাবাসীও গর্ব প্রকাশ করে এ নিয়ে। আলিনগর স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষও ইয়াসিন আলীর প্রতারণা ধরতে না পেরে গত ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেয়। উল্লেখ্য, সংবর্ধনা দেয়ার খবরটি দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সংবর্ধনার পর থেকে বিভিন্ন দিক থেকে সন্দেহের তীর ছোঁড়া হলেও বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয় এবং গণমাধ্যমকর্মীরা এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। দিল্লির সার্ক ইউনিভার্সিটিতে ‘করোনা ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আয়োজনের কোনো খবর দৃষ্টিগোচরও হয়নি। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়েই নিজেকে সেরা বক্তা দাবি করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যম ও তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে ইয়াসিন।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে দেয়া ব্যাখ্যায় আলিনগর স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন, “গত ২৪,২৫ ও ২৬ জানুয়ারি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে “সার্কের সেরা বক্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলিনগর স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন আলী”সহ বিভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদগুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। প্রকাশিত সংবাদগুলোতে বলা হয় “করোনা ও বঙ্গবন্ধু প্রতিভা” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় সার্কের ৮টি দেশের প্রতিযোগীদের মাঝে ইয়াসিন সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়। ইয়াসিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যম ও তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তাঁর এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা করে। তাঁর সনদ ও কথাবার্তায় অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর এসব তথ্য ভুয়া। ইতোমধ্যে মো. ইয়াসিন আলীকে প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।”
ইয়াসিনের বাবা আলীনগর ইউনিয়নের মকরমপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম তাঁর ছেলের সাফল্যের কথা শুনে প্রথমে খুশি হলেও পরে তাঁর ছেলের প্রতারণা খবরে হতাশ হয়েছেন।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা আবুল কাশেম মু. মাসুম বলেন, ইয়াসিন সেরা বক্তা হয়েছে এ সংবাদে আমরা ইউনিয়নবাসী খুশি হয়েছিলাম। পরে জেনেছি, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আলীনগর স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রবিউল আওয়াল বলেন, তাঁর মুখে শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। কিন্তু তাঁর সনদ ও ক্রেস্ট এবং তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ঘটনাটি ভুয়া। আমরা এরই মধ্যেই তাঁকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করেছি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানান, ইয়াসিন আলীসহ তাঁর অভিভাবককে তলব করা হয়েছে।