খুলনা জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত ভৈরব নদীর ৯টি খেয়াঘাটের অন্যতম দিঘলিয়ার দেয়াড়া-দৌলতপুর বাজার খেয়াঘাট। যে খেয়াঘাটটিতে রয়েছে দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম ও পুঞ্জীভূত সমস্যা। অনেক ঘটনা, বাক বিত-া, হানাহানি, জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি একটুও টলাতে পারেনি এ ঘাটের জগত পাথরের ন্যায় গেড়ে বসা নানা অনিয়ম ও সমস্যাকে। এ খেয়াঘাটের বড় সমস্যা ঘাটের দুর্বিষহ অবস্থান। সরকারি এ খেয়াঘাটটির এতই অনিয়ম ও দুর্ণীতির মূল্যমান যে সরকারি ঘাটে একটি মহলের লাখ লাখ টাকার অবৈধ সীটের ব্যবসা। যে সীটের ব্যবসার কাছে জিম্মি খেয়াঘাটটির ঠিকাদার, দিঘলিয়ার লক্ষ লক্ষ পারাপার যাত্রী, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন। আর অবৈধ সীটের বড় ঢাল ঘাটের মাঝিরা। খেয়াঘাটের বেহাল দশা, মেরামতের উদ্যোগ নেই।কয়েক যুগ পার হলেও ঘাটটি খেয়াবিহীন খেয়াঘাট, পার্শবর্তী সরকারি স্টিমার ঘাট ও লঞ্চ ঘাটটি অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকলেও এ ঘাটের লাখ লাখ মানুষের মালামাল নিয়ে বাজারের চিপাগলি দিয়ে ঘাটে যাওয়া-আসা করতে হয়।
ঘাটটির এ নানাবিধ পুঞ্জীভূত সমস্যার ফলপ্রসু সমাধান না হলে যে কোন সময় ঘঠতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ভৈরব নদীর পূর্ববর্তী দেয়াড়া ও পশ্চিমপাড়ে দৌলতপুর খেয়া ঘাটটির দুই প্রান্তের সিঁড়ি নদীতে বসে যাওয়ায় ও পূর্ব পাড়ের সিঁড়ির মাথা ভেঙে যাওয়াতে হাজার হাজার যাত্রী পারাপারে প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। ওই ঘাটটি দিঘলিয়ার উল্লেখযোগ্য ব্যস্ততম এই ঘাটটি দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী, যানবাহন ও বিভিন্ন মালামাল। ঘাটটিতে প্রতিনিয়ত জনপ্রতি ১ টাকা টোল আদায় ও ট্রলারে ২ টাকা নেওয়া হচ্ছে কিন্তু ঘাটে নেই সরকারি কোন ট্রলার। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মহিলা, বৃদ্ধা ও শিশুদের। স্থানীয় সূত্র ও ঘাট মাঝি থেকে জানা যায় গত ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ওই খেয়া ঘাটটি পুনঃনির্মাণ করা হলেও বছর যেতে না যেতেই সিঁড়ির ধাপগুলো সমান হয়ে যায় ও পানির চাপে মালবাহী জাহাজের আঘাতে পূর্বপাড়ের সিঁড়িটি ফাটল ধরে মাথা ভেঙে পড়ে। প্রভাবশালীমহল জাহাজটি আটকিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করে আত্মসাৎ করার কথা জানা গেলেও ঘাট মেরামতের কোন উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেনি। ওই দেয়াড়া খেয়া ঘাটটি প্রতিবছর ডাকে ইজারা বিভিন্ন ব্যক্তি পেলেও সিঁড়ি দুটি নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু নিয়মিত জনপ্রতি ব্যতীত ১০ কেজি মালামালেও ঘাটে টোল দিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য কয়েক বছর আগে ওই ঘাটের ১টি ট্রলার ডুবে একাধিক প্রানহানি ও মালামালের ক্ষয়-ক্ষতি হয় এবং গত কিছুদিন পূর্বে আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিঁড়ি থেকে ট্রলারে ওঠার সময় পা পিছলে ৬ বছরের একটি শিশু সহ এক মহিলা পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়। এমনকি দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কারের জামাতা আলাউদ্দিন ঘাট থেকে পড়ে এখনও সুস্থ হতে পারেননি। এমনি প্রতিনিয়ত ঘটছে যাত্রীদের নানা দুর্ঘটনা ও জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি।
এদিকে দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া-দৌলতপুর বাজার খেয়াঘাটটির ইজারাদার এ প্রতিবেদককে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পারাপারের দায়িত্ব তাদের নয়। তাদের দায়িত্ব ঘাটে ২ টাকা করে টোল আদায় করা। উল্লেখ্য যে, খেয়াঘাটের ইজারাদারগণও ঘাট মাঝিদের কাছ থেকে ঘাট খাজনা বাবদ প্রতিদিন ৩০/৪০ টাকা করে আদায় করে। ঘাটের মাঝিরা ও ইজারাদারগণ উভয়ে পারাপার যাত্রীদের কাছ থেকে ২ টাকা টোল আদায় করছে। মালামালের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া-দৌলতপুর বাজার খেয়াঘাটটি মহল বিশেষের ত্রিমুখি বানিজ্যের কাছে কাছে জিম্মী। এ জিম্মীদশা থেকে ঘাটটিকে উদ্ধার করতে হলে প্রথমে ঘাটটির পশ্চিম পার স্থানান্তর করে লঞ্চ ঘাটে নিতে হবে। ঘাটে অবৈধ লাখ লাখ টাকার সীট ব্যবসা উচ্ছেদ করতে হবে। পশ্চিম পারে পল্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টোল চার্ট প্রদর্শন করতে হবে। ঘাট দ্রুত মেরামতের আওতায় আনতে হবে। ঘাটে সরকারিভাবে ট্রলার সরবরাহ করতে হবে। ব্যক্তির উপর পারাপার নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে হবে। জেলা পরিষদের ঘাটগুলো তদারকি বাড়াতে হবে।