মিনহাজ নদীর মুখ ভরাট হওয়ায় খুলনার পাইকগাছা-কয়রায় ৯৫ গ্রামের ৪৬টি মৌজা বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদী ইজারা দেয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীটি উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের অবস্থিত। দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। জমির পরিমান ২৫১ একর। যার মধ্যে মিনহাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দু'শ বিঘার বেশী ভরাট হয়ে গেছে। বদ্ধ জলাশয় হিসেবে এটা ইজারা দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। দীর্ঘ দিন যাবৎ নাব্যতা হ্রাসে নদীসহ গেটটির সামনের ক্যানেলটি সরু হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের প্রধান অন্তরায় হয়ে পড়েছে। মিনাজ নদীর মাত্র ২.৫২ একর জমি ইজারা দেওয়ায় ইজারাদারদের অপরিকল্পিত নেট-পাটা দিয়ে নদী শাষনে মাছ চাষে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার। নদীটি পাইকগাছায় লস্কর, চাঁদখালী, গড়ইখালী ও কয়রা উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের ৯৫ গ্রামের ৪৬ মোজার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। নদীর ভরাট হওয়ার কারণে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পানি স্বাভাবিক গতিতে নামতে না পারায় গোটা এলাকা প্লাবিত হয়। চরম ক্ষতি সম্মুখীন হয় আমন চাষীরা। গত বছর ৯০ ভাগ জমির ধান সহ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান নেতৃত্বে এলাকাবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসলেও সমাধান আসেনি। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান এমপি, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবকে অবহিত করেও কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমে এলাকার বৃষ্টির পানি সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় গজালিয়া থেকে চাঁদখালী অভিমুখে পীচের রাস্তায় পানি উঠে যায়। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, স্থানীয়রা রাস্তার উপর থেকে মাছও ধরে। বর্ষা মৌসুমের ৩ দিনের পানি সরতে সময় লাগে অত্যন্ত ১৫ দিন। এ সময় সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায় এলাকার ধান ও মাছ চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষত্রিগ্রস্থ হয়। ধ্বসে পড়ে বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি। নদী পাশের রাস্তা সংষ্কার হলেও পানির তোড়ে তা বারবার ভেঙ্গে যায়। লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন এফএনএসকে বলেন, বাস্তবতার আলোকে মিনাজ নদীর চর ভরাটি অংশ খনন পূর্বক অবমুক্তকরা এখন সময়ের দাবি। আর তা না হলে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ধান চাষ কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। ১১ বছর ধরে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম কেরু এফএনএসকে বলেন, এলাকাবাসীকে বাঁচাতে নদী খননে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। চাঁদখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদ আবু ইলিয়াস এফএনএসকে বলেন, মিনহাজ নদীই একমাত্র উপায় যার পানি উঠা নামার মাধ্যমে কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। ইজারা বন্ধ করে নদী খননের মাধ্যমে কৃষক তথা এলাকাবাসীকে বাঁচাতে হবে। এলাকাবাসী জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।