দেশের সর্ববৃহৎ জলাভুমি হাকালুকি হাওরের দেড় হাজার একর আয়তনের সর্ববৃহৎ গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্ধ) জলমহালের ওপর স্থিতাবস্থা জারি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি করেছেন মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমদ এবং বিচারপতি কাজি জান্নাত হকের দ্বৈতব্যাঞ্চ এই আদেশ জারি করেন।
উচ্চ আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় সরকারি ইজারা মূল্যের অর্ধেকমূল্যে বরুদল মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে খাস কালেকশনের অনুমতি দেয় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাওরের মৎস্য সম্পদ লুটেরা বাহিনী সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খাস কালেকশনের নামে জলমহালটি ইজারা নেয়। সুপ্রিমকোর্টের স্থিতাবস্থা জারির আদেশের পরও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খাস কালেকশনের নামে মাছ হরিলুট চলছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের সর্ববৃহৎ গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্ধ) জলমহালের ইজারা নিয়ে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে পৃথক দু’টি মামলা চলমান ছিল। একটি মামলায় ইজারা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের ওপর জারিকৃত স্থিতাবস্থা বহাল ছিল। এমতাবস্থায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন অন্যান্য জলমহালের সাথে ওই জলমহালের খাস কালেকশনের ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রশাসন অতি গোপনে সরকারি মূল্যের অর্ধেক দামে জলমহালটি খাস কালেকশনে বরুদল মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারা প্রদান করে।
এদিকে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে রীট পিটিশন (নং ৬৮১/২০২২) দায়ের করেন। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমদ এবং বিচারপতি কাজি জান্নাত হকের দ্বৈতব্যাঞ্চ ২৩ জানুয়ারী জলমহালটির ওপর স্থিতাবস্থা জারি এবং ভুমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), বড়লেখা উপজেলা ইউএনও ও সহকারি কমিশনার (ভূমি)’র বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি করেন।
বড়লেখা সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, আমাদের সমিতি বাদি হয়ে গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্ধ) জলমহাল নিয়ে হাইকোর্টে রীট পিটিশন (নং-১৫৬১/১৮), সরকার বাদি হয়ে সুপ্রীমকোর্টে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল (নং-১৯/২০২০) মামলায় স্থিতাবস্থা চলমান ও বিচারাধীন এবং মাধবকু- মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির রিভিউ পিটিশন (নং-২৩৩/২০২১) চলমান রয়েছে। উচ্চ আদালতের সর্বশেষ নির্দেশ অমান্য করে জলমহালটি লুটপাটের অপচেষ্টায় সরকারের প্রায় ৪২ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি সাধন করে খাস কালেকশন ইজার দেওয়া হয়। এতে আমাদের সমিতি মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে রীট পিটিশন করায় স্থিতাবস্থা জারি হয়েছে।
এব্যাপারে জানতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মেহেদী হাসান জানান, তিনি অসুস্থ। বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় আসায় ডিসি স্যার ব্যস্ত রয়েছেন।
বড়লেখা ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, আদালতের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার কোন কপি এখনও তিনি পাননি। নির্দেশনা পাওয়া গেলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।