গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া পিচের রাস্তায় একের পর এক চলছে কাকড়া গাড়ি (ট্রাক্টর) ও শ্যালো চালিত পাওয়ার ট্রলি। এসবের কোনটি সামনের ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছে, আবার কোনটি ভাঁটা থেকে ইট নিয়ে যাচ্ছে অন্যত্র। অনাবরত চলছে অবৈধ যান গুলো। দিন দিন রাস্তায় মাটি ও ইটের গুড়ো পড়ে আলগা ধুলোয় প্রলেপ আছে। এসব ইট ও মাটিবাহী যান রাস্তায় উঠলেই ধুলোয় চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও ধুলোর অন্ধকার কমেনা। রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর, ঘরের আসবাবপত্র, জমির ফসল ও গাছপালায় এই ধুলোর আস্তর পড়ে লালচে হয়ে আছে। নিয়মনীতি সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে এভাবেই গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বড়াইকান্দী ও শতীতলা গ্রামে জনবসতিপুর্ণ ও আবাদি জমির মাঝে ইটভাটা নির্মান করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আইন অমান্য করে উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের ভন্নতের মোড়ের সামনে ইরিবোরোর ক্ষেত সহ আবাদি জমির মাঝখানে পর পর তিনটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামের সরদার বাড়ির পিছনে আবুল কাশেমের এসবিএস ব্রিকস, তার পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে শতীতলা গ্রামের কাঠালতলী মোড়ের পিছনে সালাউদ্দিন তালুকদারের তালুকদার একতা ব্রিকস নামের ইটভাটাটি নিয়মনীতি সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে আবাদি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। সততা ব্রিকস নামের ইটভাটাটি কিছুটা নিয়ম মেনে জনবসতি থেকে খানিকটা দুরে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েক বছরে উপজেলায় নতুন করে আরও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠছে আবাদি জমিতে। ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত-২০১৩) অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আবাদি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন এবং ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও ওই এলাকায় আবাদি জমির মাঝখানে ইটভাটা নির্মাণে আইনের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্রও নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ইটভাটার আশপাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাদ। ইটভাটার ধোঁয়া, গ্যাস, ধুলাবালির কারণে এসব ক্ষেতের ফসল উৎপাদন ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সাড়াদিন রাত ধরে মাটি ও ইট আনা নেওয়া করায় গ্রামের রাস্তাটি ভেঙে গেছে। রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী পথচারী শামীম মিয়া জানালেন, ইটভাটার কারণে ভালো সড়কটি অল্পদিনেই শেষ। শুক্রবার বিকালে সরেজমিন বড়াইকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আবুল কাশেমের (এসবিএস ব্রিকস) ইটভাটায় নতুন ইট তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কয়লা ভাঙানোর মেশিনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। জানা গেলো আশপাশে প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি লিজ নিয়ে ভাঁটা স্থাপন করা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আছিতন বেগম জানান, এ এলাকায় গাছগছালিতে তেমন ফল ধরেনা। ভাটার কারণে সমস্যা লেগেই আছে। ইটভাটার আশে পাশের আবাদি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) কেটে ভাটায় আনা হচ্ছে। এতে জমি গুলোর উর্বরা শক্তিও কমে যাচ্ছে। গ্রামের কৃষকরা তাদের ভয়ে কথা বলেন না। নাম প্রকাশ না করে তারা জানান, ভাটার কারণে জমির আবাদ নিয়ে চিন্তায় আছি। এ কথা কাকেই বা বলবো? তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কৃষক জানান, ভাটার পাশেই তার জমি। ভাটার কারণে জমিতে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। জমির মালিকরা অভিন্ন সুরে বলেন, ‘দেখতেই তো পাচ্ছেন কিভাবে আবাদি জমির মধ্যখানে ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার উত্তর দিকের জমির মালিক বলেন, ‘শুনেছি, আবাদি জমির মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ করা বেআইনি কাজ। তা হলে এ ইটভাটা কীভাবে হলো?’ ইটভাটার মালিক ও পরিচালক তোরাব আলী বলেন, আমাদের সব কাগজ আছে। সব আইন মেনে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। কাগজের কোন সমস্যা নেই। ইট প্রস্তুতের জন্য আশপাশের জমি লিজ নেয়া হয়েছে।’ সাঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার সাদেকুজ্জামান বলেন, ‘আবাদি জমির মাঝখানে ইটভাটা নির্মাণ অবশ্যই বেআইনী। তবে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ আমি যোগ দেওয়ার পর প্রত্যায়নের জন্য কোন ভাঁটা মালিক আসেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, এ বিষয়টি জেলা প্রশাসনে জানালে ভাল হয়। এলাকাবাসী অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখবো।