অবকাঠামোগতভবে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনেক উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ফলে অবকাঠামোর দুর্বলতা অনেকটাই কমেছে।
তবে অবকাঠামোর এই অগ্রগতির পরও দেখা যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে কাক্সিক্ষত গতি আসছে না। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত জরিপে তার কিছু কারণ উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২১ : উদ্যোক্তা জরিপ’ শিরোনামের এই জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের ৬৮ শতাংশই মনে করেন দেশে ব্যবসা উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা বা প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দুর্নীতি। তার পরই যে দুটি বাধা ব্যবসার পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা, সেগুলো হলো অদক্ষ আমলাতন্ত্র (৬৭ শতাংশ) ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা (৫৫ শতাংশ)।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পক্ষে সিপিডি প্রতিবছর বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে। জরিপে ১০টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা, আর্থিক বিষয়াদি, ব্যবসায় বিনিয়োগ, প্রতিযোগিতা, ব্যবসা পরিচালনায় সুশাসন, মানবসম্পদ গড়ে তোলা, কাজের পরিবেশ ও কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঝুঁকি। করোনার নতুন ঢেউ ব্যাপকতা পাওয়ায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এ বছর ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রিপোর্ট ২০২১-২২’ প্রকাশ করছে না। তাই সংস্থাটির সম্মতি নিয়ে সিপিডি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারির কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। তাঁদের এভাবে পিছিয়ে থাকার জন্যও প্রধানত দায়ী দুর্নীতি। কারণ দুর্নীতি বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি করছে। তাঁদের মতামতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের শতভাগই মনে করেন দুর্নীতি তাঁদের ব্যবসার প্রধান বাধা।
এতি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল নয়। এর কারণে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই কাক্সিক্ষত গতি পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ, জ¦ালানিসহ অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হওয়ার পরও বিনিয়োগে গতি না আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্বব্যাংক ২০১৯ সালে ১৯০টি দেশের মধ্যে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নামে যে তালিকাক্রম বা সূচক প্রকাশ করে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এমনকি বাংলাদেশ আফগানিস্তানেরও (১৬৭তম) নিচে ছিল। বাংলাদেশের এমন পিছিয়ে থাকার কারণ যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি তা আগেও অনেক জরিপ ও গবেষণায় উঠে এসেছে।
স্বল্পোন্নত দেশের গ-ি পেরিয়ে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা কিভাবে সম্ভব হবে। সরকার আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির মূলোৎপাটনে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিবে এটাই প্রত্যাশা।