যত্রতত্র খোঁড়াখুড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলায় রাজধানীর কোথাও না কোথাও জনভোগান্তি লেগেই থাকে। এসবের মধ্যে মেট্রো রেলের নির্মাণকাজের জন্য রাজধানীবাসীকে বছরের পর বছর বহু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এই রেলপথের সঙ্গে যুক্ত অনেক সড়কেই মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা থাকতে হয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তায় প্রবল ঝাঁকুনি খেতে হয়েছে। ধুলা-কাদায় মাখামাখি হতে হয়েছে। এমন কষ্টের অভিজ্ঞতার পরও মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে যখন শেষ ভায়াডাক্ট বসানোর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রো রেল এক রেখায় নিরবচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হলো। এখন ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন বসবে, বিদ্যুৎ সংযোগ ও স্টেশন তৈরি করা হবে। তার পরই চালু হবে স্বপ্নের মেট্রো রেল। এরইমধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রো রেল চলাচল করছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে এই অংশে মেট্রো রেলে যাত্রী চলাচল শুরু হবে।
রাজধানী ঢাকার যানজট যে পর্যায়ে চলে গিয়েছিল তাতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। এরইমধ্যে বেশ কিছু ফ্লাইওভার ঢাকার যানজট কিছুটা হলেও কমাতে পেরেছে। মেট্রো রেল উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) চলমান বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে যানজট সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের কাজ আরো দ্রুততর করা জরুরি হয়ে উঠেছে। মেট্রো রেলের নিচের অংশের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন নিচের সড়কপথে যাতে নির্বিঘেœ যান চলাচল করতে পারে দ্রুত সেই ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী এপ্রিল থেকে স্টেশনের অংশ ছাড়া মিরপুর এলাকার বাকি সড়কপথ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আমরা আশা করব, সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি অংশের সড়কও নির্বিঘেœ যান চলাচলের উপযুক্ত করে তোলা হবে।
ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর। তদুপরি পরিকল্পিতভাবে শহরের সম্প্রসারণ না হওয়ায় পর্যাপ্ত সড়কপথও গড়ে ওঠেনি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সমতলে সড়কপথ বৃদ্ধি করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় যানজট নিরসনে ওপর দিয়ে কিংবা মাটির নিচ দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। সে লক্ষ্যেই সরকার এসব উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ধীরগতি মানুষের ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হয়েছে। ধীরগতির কিছু বাস্তব কারণও রয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির কারণে অনেক দিন মেট্রো রেলের কাজ বন্ধ থাকে। গত দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারিও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি শ্লথ করেছে। বর্তমানে বিআরটি লাইন-৩-এর কাজ ব্যাপক জনভোগান্তির কারণ হচ্ছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত অংশে বছরের পর বছর ধরে চলছে এই ভোগান্তি। দ্রুত এই ভোগান্তির অবসান হওয়া প্রয়োজন। বৃহত্তর কল্যাণের জন্য উন্নয়নকাজ চলাকালে কিছু ভোগান্তি মানুষকে পোহাতেই হবে। কিন্তু সেই ভোগান্তি যত কম হয়, ততই মঙ্গল। সেজন্য যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো বটেই, সম্ভব হলে তারও আগে সম্পন্ন করার চেষ্টা করতে হবে।