অসুস্থ অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়েছিলেন সনেকা বেগম নামের এক বৃদ্ধা। এ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন এক ভ্যানচালক।
গত ১ ডিসেম্বরের হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য ভর্তি হন সনেকা বেগম। এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই মাস। শারীরিক অবস্থা ভালো হয়েছে ওই বৃদ্ধার। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবার থেকে খোঁজ নেয়নি কেউ।
পরিচয় জানতে চাইলে ওই বৃদ্ধা শুধু নিজের নামটা বলতে পারেন। বলেন, সনেকা বেগম। দেখে মনে হয় ষাটোর্ধ্ব।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আতিকুল হক জানান, ১ ডিসেম্বর রাতে এক ভ্যানচালক সনেকা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
নারী ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানো হয় তাঁর। তিন দিনেই তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালিয়ে তাঁর ঠিকানা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এখন আত্মীয়স্বজন কেউ তাঁর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। তাই প্রায় দুই মাস ধরে তাঁর ঠিকানা হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি শয্যা।
জানা যায়, সনেকা বেগম উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামীর নাম মৃত আতাহার আলী। বিয়ের তিন মাস পরই স্বামী মারা যান তাঁর। পরে তিনি আর বিয়ে করেননি। ছেলেমেয়ে না থাকায় তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁর তিনটা বোনও আছে। অথচ দুই মাস ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও তাঁরা কেউ চোখের দেখাও দেখতে আসেননি। চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সনেকা বেগম বসে বসে কলা-পাউরুটি খাচ্ছেন। দেখে অনেকটাই সুস্থ লাগছিল তাঁকে। হাসপাতালের আয়া ফুলন বেগম তাঁর পাশে বসে আছেন।
ফুলন বেগম বলেন, এই নারী প্রায় দুই মাস আগে হাসপাতালে এসেছেন। তখন তিনি খুবই অসুস্থ ছিলেন। তাঁর হাত-পায়ে ঘা ছিল। পরনের পোশাকও ছিল নোংরা। কিন্তু এখন সুস্থ। নিজেই নিজের সব কাজ করতে পারছেন।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স মাহমুদা খানম বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর অনেকে তাঁর কাছে ভিড়তে চাননি। আমরা তাঁকে নিয়মিত গোসল ও খাবার দিয়ে সুস্থ করে তুলেছি। কিন্তু এখন একটা ব্যবস্থা করা দরকার।’
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, অনেক কষ্টে সনেকার ঠিকানা জোগাড় করে পরিবারকে খবর দিয়েছি। তবুও তাঁরা একটু যোগাযোগ করেনি। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? আয়া ও নার্সরা দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি তাঁর বাড়তি যতœ নিতে গিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। করোনার সময়ে হাসপাতালে শয্যারও সংকট। এ অবস্থায় দ্রুত তাঁর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার।
সনেকা বেগমের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম বলেন, তাঁর বোনের মাথায় সমস্যা আছে। তাঁদের কথা শোনেন না। এজন্য তাঁরা যোগাযোগ করেননি। কিন্তু সনেকা এখন কোথায় যাবেন, জানতে চাইলে তাঁর এই ভাই বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।