উচ্চ শিক্ষার হার যতই বাড়ছে, বেকারত্বের সম্ভাবনা ততোই প্রশস্ত হচ্ছে। এরমাঝে করোনা মহামারির কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে অথবা বেতন কমে যাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক ট্রেন্ডস-২০২২ প্রতিবেদনে বিশে^র বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের বর্তমান অবস্থা ও পূর্বাভাস তুলে ধরতে গিয়ে বলেছে, করোনা মহামারিতে চলতি বছর বিশে^ বেকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ কোটি ৭০ লাখ। এ সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২ কোটি ১৩ লাখ বেশি। করোনার প্রাদুর্ভাব ও সময় সম্পর্কে অনিশ্চয়তার কারণে বিশে^ আগামী বছর পর্যন্ত বেকার মানুষের সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি থাকবে। আগামী দিনে চাকরি হারানো সব মানুষের চাকুরী ফিরে পাওয়া ও মহামারির আগের কর্মক্ষমতায় ফিলে যাওয়া বেশিরভাগ দেশের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের কোনো হালনাগাদ পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারনা করা যায় এ সংখ্যা খুব একটা কম হবেনা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছে, স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার। ওই প্রতিষ্ঠানের মাত্র ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান এবং মাত্র ৩ শতাংশ স্ব-উদ্যোগে কিছু একটা করেন। দুই বছর আগেও বিশ্ব ব্যাংক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর জরিপ করে দেখিয়েছিল স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদের ৪৬ শতাংশ বেকার; যারা তিন বছর ধরে চাকুরী খুঁজছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্ব শেষ শ্রমশক্তি অনুযায়ী দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি, যেখানে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিত বেকার। অন্যদিকে দেশে প্রতিবছর শ্রম শক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। কিন্তু সে অনুসারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে বেকার থাকছেন একটা বিরাট অংশ।
দেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থার জরিপ ও গবেষণায় দেশের শ্রমশক্তির হিসেব উঠে আসলেও এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে বেকার ও কর্মসংস্থানের কোনো তথ্য পাওয়া যাবে কিনা তাও তমাশাচ্ছন্ন। সাধারণত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে বেকারের পরিসংখ্যান জানা গেলেও তা গত পাঁচ বছর করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছিল, যা প্রকাশ করা হয় ২০১৭ সালে। অথচ মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত প্রতি দু’বছর পর পর এ জরিপ করতে হবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড সহ বিশে^র অনেক দেশেই প্রতি মাসে বা তিন মাস পরপর বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষিত বেকারের বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে অশিক্ষিত তরুণ সমাজ রয়েছে। তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাজে যুক্ত করার কোনো তৎপরতা নেই। যে যেভাবে পারছে কাজে লেগে পড়ছে। অথবা বেকারত্বের হতাশায় ভুগছে।
আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার শক্তি। কিন্তু সেই শক্তি যদি বেকারত্বের নির্মম থাবায় হতাশায় নিমর্জ্জিত থাকে তবে তারা দেশের কল্যাণে কাজ করবে কি ভাবে? আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মহাসড়কে উঠেছে। কিন্তু দেশের তরুণ প্রজন্মকে বেকারত্বের দু:সহ অবস্থার মধ্যে রেখে কি দেশকে উন্নত করা সম্ভব হবে? না সেই উন্নয়ন টেকসই হবে? তাই যথাযথ জরিপের মাধ্যমে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার চিহ্নিত করে তাদের কর্মসংস্থান করা এখন সময়ের দাবি। এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।