দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয় কাপ্তাই হ্রদ ঘেরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে বাঁধ দিলে এই বিশাল হ্রদের সৃষ্টি হয়। এ সময় হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায় রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ফসলী জমিসহ বিস্তৃর্ণ জনপদ।
শীত মৌসুমে এ হ্রদের পানি আস্তে আস্তে কমতে থাকলে পাহাড়ি ঘোনায় ভেসে উঠে জলে ভাষা চাষাবাদ যোগ্য জমি। যার পরিমান প্রায় তিন হাজার হেক্টরের বেশি। পলি ভরাট এসব জমিতে নির্ভর করছে ২০ হাজারের অধিক চাষি। আর আস্তে আস্তে হ্রদের পানি কমতে শুরু করায় এইসব জলে ভাসা জমিতে বীজতলা তৈরীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কিষানীরা। কিন্তু হ্রদের পানি উঠা নামার স্থায়ী নীতিমালা না থাকায় এসব জমির চাষাবাদ অনিশ্চয়তায় রয়েছে পাঁচ যুগ ধরে। এতে করে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে কৃষকরা দিনের পর দিন চাষ করছেন জলে ভাষা জমিগুলোতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত হ্রদের পানি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকলে ভেসে উঠে জলে ভাষা চাষাবাদ যোগ্য জমি। এসব জমিকে জলেভাসা জমি বলা হয়ে থাকে। জলেভাসা জমিতে বরো ধানসহ শীত কালীন সবজি, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে প্রায় বিশ হাজারও বেশী কৃষক। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদের পানি দেরিতে কমলে বা বর্ষাকালে দ্রুত বেড়ে গেলে কপাল পুড়ে জলেভাসা জমির চাষীদের। নির্ধারিত সময়ে পানি উঠানাম না করায় প্রায়ই পানিতে তলীয়ে যায় ফসলি জমি।
চাষিরা জানান, দেরিতে পানি কমলে দেরিতে জমি ভেসে উঠে সে জমিতে বীজতলা তৈরী করে স্বপ্নের চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু এপ্রিল মে মাসে বর্ষা শুরু হলে হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। সে সময় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি ছাড়া না হলে পানিতে তলীয়ে যায় জলেভাসা জমির স্বপ্নের ফসল।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি উঠা নামার স্থায়ী কোন নীতিমালা তৈরী হয়নি দীর্ঘ ৬০ বছরেও। তাই জলে ভাসা জমির চাষীদের চাষাবাদ করতে হয় নিজেদের ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে। কোন বছর ফসল ঘরে তোলা গেলে আবার কোন বছর তোলা যায় না। আর যদি ভাগ্যে মিলায় তা হলে কৃষকদের ঘরে এইসব ফসল তুলতে পারা যায়। আর এতে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে।
রাঙ্গামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকার চাষি বিলাস চাকমা ও রতিকা চাকমা জানান, এমনিতে সার, বীজসহ কৃষি সরঞ্জামের দাম উর্ধগতি। এরপরও জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে চাষিরা। কিন্তু ফসল তোলার সময়ে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গেলে চাষিরা সর্বশান্ত হয়ে যায়। এজন্য হ্রদের পানি উঠানামার বিষয়ে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী নীতিমালা ঠিক করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমির পরিমাণ নির্ভর করে হ্রদের পানি উঠানামার উপর। পানি কমতে থাকলে জমি ভেসে উঠে আর এতে চাষাবাদ শুরু হয়। কিন্তু কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাধের পানি ছাড়া নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর। তাই কোন কোন বছর অগ্রীম বৃষ্টিপাত শুরু হলে হ্রদের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। বিশেষ করে এপ্রিল মে মাসের দিকে যে সকল জমিতে ফসল থাকে তা ডুবে যায়। তাই জলে ভাসা জমির পরিমান ও নির্ধারণ করে হ্রদের পানি উঠা নামার উপর। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টি করেছে। তাই জলে ভাসা জমির চাষাবাদের কথা চিন্তা করে পানি উঠা নামার কোন নীতিমালা হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আবারো আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।