ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে শোকজ’র উত্তর প্রদান ও অভিযোগকারী ছাত্রীর কাছ থেকে অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার পর থেকে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের বহুলালোচিত শিক্ষক সৌমিত্র সাধু। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুরু থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন সময় শিক্ষকের পক্ষে মহল বিশেষ দৌঁড়-ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছে। তবে ঘটনার মাসাধিককাল অতিক্রান্ত হলেও সিদ্ধান্ত আসেনি কলেজে পরিচালনা পরিষদের। ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের বিষয়টিও প্রথমত ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়। পরে সামাল দিতে না পারায় গত ১৫ জানুয়ারি কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষকে একটি শোকজ। ২২ জানুয়ারি এর উত্তরের পাশাপাশি একই দিন ছাত্রীর পক্ষে শিক্ষককে অভিযোগমুক্ত করতে একটি অনাপত্তিপত্র (প্রত্যাহার) প্রদানের পর থেকে খোশ মেজাজে রয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষকসহ তার অনুসারীরা। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলের প্রশ্ন এত বড় অভিযোগের পর মাসাধিককাল অতিক্রান্ত হলেও পরিচালনা পরিষদ এখন পর্যন্ত কোনো মিটিংয়ে বসতে পারেনি। এমনকি এনিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই অভযুক্ত শিক্ষকের দায়মুক্তির বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন কেউ কেউ। তবে কি পার পেয়ে যাচ্ছেন সৌমিত্র? এমন প্রশ্ন বার বার ঘুর-পাক খাচ্ছে সর্বত্র। প্রসঙ্গত, কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে নিজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করে একই কলেজের জনৈকা মেধাবী ছাত্রী (এইচএসসি পরীক্ষার্থী)। গত বছর ২১ ডিসেম্বর সে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর ঐ অভিযোগপত্রটি দাখিল করে। তবে শুরুতে বিষয়টি গোপণ করতে নানা অপতৎপরতা শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে মিডিয়ার চাপের মুখে কলেজের অধ্যক্ষ গত ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষক সৌমিত্রকে ৭ দিনের সময় দিয়ে একটি শোকজ করেন। স্মারক নং-৮০/৩৯৩/২২। এরপর অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে রীতিমত মিশন নিয়ে মাঠে নামেন মহল বিশেষ। শনিবার (২২ জানুয়ারি) নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিনে সৌমিত্র নিজেকে ধোয়া তুলশীর পাতা হিসেবে জাহির করে শোকজের জবাব দেন। যাতে তিনি লেখেন যে, কোনো ছাত্রীর সাথে তার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১২ সালে কলেজে যোগদানের পর থেকে কলেজের সুনাম ও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। যেখানে আলাদাভাবে কাউকে পড়ানো হয়না। কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন ও তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ ওই ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগপত্রটি লিখিয়ে নিয়েছে বলে দাবি তার। একই দিন শিক্ষকদের পক্ষে ছাত্রীর লেখা একটি অনাপত্তিপত্র দাখিল করা হয় অধ্যক্ষকে। যাতে ছাত্রী লেখেন যে, গত ২১ডিসেম্বর কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধু তাকে তার কোচিং সেন্টারে একা পেয়ে যে, অশোভন আচারণ করেন তা শ্লীলতাহানীর সামিল। আবেগেরে বশবর্তী হয়ে অভিযোগটি করেছিল এখন তা প্রত্যাহারের আবেদন করে। এর আগে গত ২১ডিসেম্বর ঐ ছাত্রী কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর একটি অভিযোগ করে যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক তাকে তার কোচিং সেন্টারে একা পেয়ে শ্লীলতাহানী ঘটান। এরপর কলেজের উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডলের নেতৃত্বে অপর সিনিয়র শিক্ষক অভিযুক্ত সৌমিত্রর এক দাদা পরিমল সাধুকে সাথে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন। এরপর ঘটনার শিকার ঐ ছাত্রী অভিযোগপত্রটি দাখিল করে। সূত্র দাবি করছে, স্থানীয় একটি ক্লিনিক মালিকের পক্ষে যিনি কিনা মৌমিত্রেরই এক বন্ধুর নেতৃত্বে অনাপত্তিপত্রটি প্রস্তুত ও সর্বোপরি খুলনায় অবস্থানরত ছাত্রীর কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় ও সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি তা কলেজ অধ্যক্ষকে দাখিল করেন। এরপর থেকেই মূলত খোশ মেজাজে রয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। সর্বশেষ কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক মহলের দাবি বিষয়টি পরিচালনা পরিষদে উপস্থাপনসহ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, ঘটনার সময় তিনি কলেজের কাজে ঢাকায় ছিলেন। তবে পরষ্পর শোনার পর সৌমিত্রকে মৌখিকভাবে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার যান। সর্বশেষ সম্প্রতি ডাকযোগে তিনি একটি অভিযোগপত্র পান। এরপর তিনি গত ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষককে একটি শোকজ করেন। তিনি ২২ জানুয়ারি তার জবাব দিয়েছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিষয়টির সমাধান করা হবে।