দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিমে) হাসপাতাল বিশেষায়িত হওয়া সত্বেও প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে চারটি বহিঃবিভাগ।
আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কুলার সার্জারি, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বহিঃবিভাগের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম ও অধ্যক্ষ ডাঃ মনিরুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ২০ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র শেবাচিম হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে সবধরনের রোগের চিকিৎসার ইনডোর আউটডোর সেবা থাকতে হবে। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্থান স্বল্পতার কারণে একাধিক রোগের ইনডোর-আউটডোর সেবা কার্যক্রম চালু ছিলোনা। বিশেষ করে কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) চিকিৎসার বহিঃবিভাগ চালু না থাকায় গরীব ও সাধারণ রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন।
এ অবস্থায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের এক সভায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি জরুরি ভিত্তিতে শেবাচিম হাসপাতালে হৃদরোগ বহিঃবিভাগ চালুর নির্দেশ দেন। তবে এ বিষয়ে বিগতদিনে হাসপাতালের পরিচালকের মধ্যে কেউই কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছরের ১৩ এপ্রিল ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ফাইলবন্দী থাকা স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর সহায়তায় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (স্বাস্থ্যসেবা) লোকমান হোসেন মিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে হাসপাতালে হৃদরোগ (কার্ডিওলজি) বহিঃবিভাগের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোএন্ট্র্রোরোলজি, ইউরোলজি ও ভাস্কুলার সার্জারি বহিঃবিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করেন। যা বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
শেবাচিমের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে প্রতিদিন ডাঃ মোঃ শাহ আলম ইউরোলজি বহিঃবিভাগে রোগীদের সেবা প্রদান করবেন। তবে স্থান স্বল্পতার কারণে প্রতি সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হৃদরোগ বহিঃবিভাগে রোগী দেখবেন সহকারী রেজিস্টার ডাঃ মুসফিকুর রহমান এবং ডাঃ একে চৌধুরী রোগী দেখবেন ভাস্কুলার সার্জারি বহিঃবিভাগে। এ ছাড়া প্রতি শনি, সোম ও বুধবার গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোরোলজি ইনডোর থেকে পাঠানো একজন চিকিৎসক এ রোগের রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করবেন।
উল্লেখ্য, পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম শেবাচিমে যোগদানের স্বল্প সময়ের মধ্যেই এন্ড্রোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস), বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ও নিউরোসার্জারি ইনডোর চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করার সব প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিটিস্ক্যান, চোখের লেসিক ও এনজিওগ্রাম মেশিন চালু করা এবং নতুন এমআরআই মেশিন সরবারের প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে আরও চারটি অত্যাধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সরবরাহ করেছেন। পাশাপাশি তার সময়েই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো ভারত সরকারের দেওয়া আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স পেয়েছে।
পরিচালক ডাঃ এইচএম সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, হাসপাতালে সবধরনের সেবা নিশ্চিত করাই হচ্ছে আমার মূল উদ্দেশ্য। অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করার মতো শব্দটি বিলুপ্ত ঘটানো। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রোগের আন্ত ও বহিঃবিভাগ চালু করতে পেরে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।