মেহেরা খাতুন, জন্ম ১৯৭৭ সালে, মাত্র এক বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে বিয়ে আর তার পরের বছর ১৯৭৯ সালেই হন প্রথম সন্তানের মা। বয়স, বিয়ের আর সন্তান জন্ম দেয়ার এমন এক অদ্ভুত সময় জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছেন নাটোর সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী মেহেরা খাতুন। ওই কর্মচারী নাটোর সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে অফিস সহকারি পদে কর্মরত আছেন।
বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগও রয়েছে ওই কর্মচারির বিরুদ্ধে। সে অনুযায়ী দাপ্তরিক ভাবে তদন্ত করা হয়। তবে তদন্তে মেহেরা খাতুনের বয়স জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণ পাননি বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তা নাটোরের জেলা রেজিস্টার শফিকুল ইসলামের। এর পরই মোহরার থেকে অফিস সহকারি পদে পদোন্নতি পান মেহেরা খাতুন। তিনি জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার লক্ষ্মীকোল মহল্লার বাসিন্দা।
মেহেরা খাতুনের দাবি, তার জন্ম ১৯৭৭ সালে হলেও '৭৮ সালে বিয়ের তথ্য ভুল। তার নামে বিয়ের যে কাবিনামা উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি জাল। তিনি বিয়ে করেছেন ১৯৮৫ সালে। তার বিয়ের কোন কাবিননামা হয়নি। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে। মেহেরা খাতুনের তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৫ সালে তার বিয়ে হলে '৭৭ সালে জন্ম অনুযায়ী মাত্র ৮ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রথম সন্তান হযরত আলীর জন্ম ভোটার তালিকায় ৭৯ হলেও প্রকৃত জন্ম ৮৬ সালে। অর্থাৎ বিয়ের এক বছর পর মাত্র ৯ বছর বয়সে মেহেরা প্রথম সন্তানের মা হন। ভোটার তালিকায় মেহেরা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে আরিফুল ইসলামের জন্ম ৮১ সালে এবং মেয়ে রঞ্জনা খাতুনের জন্ম ৮৩ সালে। অথচ মেহেরা খাতুন বিয়ে করেছেন ১৯৮৫ সালে। এ ব্যাপারে মেহেরা খাতুনের দাবি তার সব সন্তানের জন্ম তারিখ ভোটার তালিকায় ভুল হয়েছে। তিনি জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন করেছেন। বিষয়টি নাটোর সাব রেজিস্ট্রী অফিসের অভ্যন্তরে বেশ আলোড়ন তুলেছে।
মেহেরা খাতুন জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সন্তানদের জন্ম। এর মাঝেই পড়াশোনা চালিয়ে এসএসসি পাস করেছেন। বয়সের বিষয়গুলো সেভাবে খেয়াল করেননি। এখন কেউ একজন তার পেছনে শত্রুতা করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
মেহেরা খাতুন ২০১৫ সালে টিসি মোহরার পদে নাটোরের লালপুর উপজেলা সাব রেজিস্টার অফিসে যোগদান করেন। এরপর কর্মরত ছিলেন বড়াইগ্রাম সাব রেজিস্টার অফিসে। বর্তমানে কর্মরত আছেন নাটোর সদর সাব রেজিস্টার অফিসে।
মেহেরা খাতুনের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ উঠার পর বিষয়টি তদন্ত করেন নাটোরের জেলা রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম নিজেই। তিনি জানান, তদন্তকালে নির্বাচন অফিস ও তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সে অনুযায়ী বয়স জালিয়াতির প্রামাণ তিনি পাননি। তবে কবে তার বিয়ে হয়েছে, বিয়ের সাথে তার জন্ম, তার সাথে সন্তানদের বয়সের মিল-অমিলের বিষয়টি ব্যক্তিগত বলে জানান জেলা রেজিস্টার শফিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে মেহেরা খাতুন ২০১৫ সালে চাকরিতে যোগদান কররেও এতোদিন পর অভিযোগ করাটাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিমত তার।