রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জের ধুমখাটিয়া এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন (৭৯)। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে ঋণ করে। যৌবনে যে মানুষটা জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। বার্ধ্যকে পৌঁছে সেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না তাঁর পরিবার। যতটুকু চিকিৎসা হয়ে তা ঋণ করে হয়েছে। লালমুক্তি বার্তা পাওয়া এই বীর সন্তানের জীবন কাটে মাহিগঞ্জের একটি ভাড়া বাসায়। দিনের পর দিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে এই মানুষটির। চিকিৎসক বলছেন তাঁর হার্টের চারটি ভাল্ব ব্লক হয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে নিজের করুণ দশার কথা ভেবে প্রতিনিয়ত চোখের পানি ফেলছেন তিনি। ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট (ইপিআর) নিয়মিত সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে অবসরের পর তিনি মাহিগঞ্জের ভাড়া বাসা সংলগ্ন একটি মুদির দোকান করে তার সময় কাটে। অর্থ-সম্পদকে কখনও গুরুত্ব দেননি। এতে করে সবার কাছ থেকে পেয়েছেন সম্মান ও শ্রদ্ধা। এতেই তুষ্ট ছিলেন তিনি। সেই বীরমুক্তিযোদ্ধার আবদুল বাতেনের জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আজ বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছেন। নানান রোগে তিনি এখন মৃত্যুর শয্যায়। অথচ চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। আবদুল বাতেন এখন দু’চোখে এখন ঝাঁপসা দেখছেন। কানেও কম শোনেন। হাঁটাচলাও করতে পারেন না। আবদুল বাতেন বলেন, চাকুরিরত অবস্থায় ২৯বছর বয়সে মাতৃভূমির টানে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে ছিলাম। তার বেসামরিক গেজেট নং ২৬৫ এবং মুক্তিযোদ্ধার নম্বর ০১৮৫০০০১৫৩৪, লাল মুক্তিবার্তা ৩১৩০১০২৩৫। অথচ আজ তার করুণ দশা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না অনেক দিন ধরে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে ভাতার যে টাকা পাই তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। পরে আবারো খরচ চালাতে ঋণ করতে হয়। আমার শেষ জীবনে মাথাগোজার ঠাই টুকু হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের ছেলে খুরশিদ আলম জানান, আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারের অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি করে দেয়া হয়েছে। তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পিতার অসুস্থতার বিষয়টি রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জামুকাসহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। বাবার চারটি ভাল্ব অকেজো হয়ে পড়েছে। চিকিৎকের পরার্মশে গত ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাই। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার পর চিকিৎসকরা ওপেন হার্ট সার্জারির পরামর্শ দেন। এরপর ২৭সেপ্টেম্বর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ওপেন হার্ট সার্জারির কথা বলা হয়। অর্থের অভাবে ওপেন হার্ট সার্জারি না করে বাবাকে নিয়ে পুনরায় রংপুর মাহিগঞ্জের ভাড়া বাসায় চলে আসি। তিনি আরও বলেন, আজ অর্থ, চিকিৎসা আর সহযোগিতার অভাবে চোখের সামনে পিতার হারানোর দিন গুনতে হচ্ছে। একজন সন্তান হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তমান মানুষের কাছে পিতার চিকিৎসার সহযোগিতা কামনা করছি। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওর্য়াড কাউন্সিলর মোক্তার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন বিছানায় শয্যাসায়ী। তবে আমার পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু জানান, আবদুল বাতেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করছেন। পরিবারে আয়ের তেমন উৎস নেই। তার পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার প্রতি বছরে ১শ’ মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রংপুরে আবদুল বাতেনের নাম দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেনের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। সাহায্য পাঠানো ঠিকানা অ্যাকাউন্ট নং ০১৯০২৬০০০০৬২ সোনালী ব্যাংক রংপুর কর্পোরেট শাখা, রংপুর।