সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার নগরঘাটা ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ৩২ঘর মুন্ডা পরিবার। রনিক ও ও বিমল মুন্ডা জানান বছরের অর্ধেক সময় বিভিন্ন এনজিওর লোন নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকার ভাটায় ইট উৎপাদনের সময় তারা অনেকেই সেখানে নিজের শ্রম বিক্রয় করেন। পাশাপাশি কৃষি কাজই তাদের একমাত্র ভরসা। তবে বিভিন্ন এনজিও, দাতা সংস্থা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারী সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। মুন্ডারা সাধারণত বন-জঙ্গল ও মাটি কাটার সাথে আদিকাল থেকেই সম্পৃক্ত রয়েছে। বর্তমান সময়ে কৃষি কাজেই বেশি নির্ভরশীল নগরঘাটা এলাকায় বসবাসকারী মুন্ডারা। এখনো তারা মাটি কাটেন, তবে সেটা ইটভাটাগুলোতে।
রনিক মুন্ডা ও বিমল মুন্ডা এ প্রতিবেদককে জানান, বছরের অর্ধেক সময় ঘরে বসে দিন পার করতে হয় তাদের। এলাকায় কাজের অভাবে তারা নিয়মিত শ্রম বিক্রয় করতে পারেন না। ফলে অনেক কষ্টে তাদের জীবন জিবিকা চলে। তাদের বিশেষ পছন্দের খাদ্য হচ্ছে সিদ্ধ চালের ভাত, রুটি, কাঁচা ফল। তাদের খাদ্য তালিকায় ইদুর, শামুখ, কুচিয়া, কাকড়াও বিদ্যমান। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোয়ায় অনেকে এখন ইঁদুর শামুক খাওয়া বাদ দিয়েছে বলে জানা যায়।
তাদের সাথে আলাপ কালে তারা জানালেন মুন্ডারা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় উপজাতি। ভারতের ঝাড়খান ও ছত্রিশগড় রাজ্যের ছোটনাগপুর অঞ্চল, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এদের বসবাস। এছাড়া, বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলেও এরা বাস করেন। মুন্ডা জনগোষ্ঠী যে ভাষায় কথা বলে তার নাম মুন্ডারি।
বাংলাদেশের খুলনা জেলার কয়রা ও ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন এলাকায়ও এদের আদি বসতির চিহ্ন মিলে। বর্তমানে সামাজিক ও শিক্ষার পরিবর্তনে অনেক মিশে গেছে সমস্ত জনজাতির সাথে। এলাকার ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করছেন বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু জানান মুন্ডারা বসবাস করে স্থানীয় মালিকদের জমিতে মৌখিক ভাবে তাদের কোন নিজস্ব জায়গা নাই। তবে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা তাদের প্রদান করা হয়ে থাকে।