বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে অনেক পানি ঘোলা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হবে কেন? শিল্পীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-অমিল এবং একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসবে কেন? এসব প্রশ্ন এখন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সচেতন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন মুভিলর্ডখ্যাত মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলে, তিনি বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। ডিপজল বলেন, শিল্পী সমিতি নিয়ে এত মাতামাতি ও আলোচনার মূল কারণ হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো কাজ নেই। হাতেগোনা কিছু সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। শিল্পীদের হাতে কাজ নেই। ফলে তাদের সব মনযোগ সমিতির দিকে। আজ যদি একের পর এক সিনেমা নির্মিত হতো, তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সমিতির দিকে মন দেওয়ার সময় পেত না। তিনি বলেন, আমার চলচ্চিত্র জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমরা যখন সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, শিডিউল দেওয়ার মতো সময় হাতে থাকত না, তখন অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এমনও সময় গেছে, কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেক সদস্য সমিতিতে যাওয়ারও সময় পেত না। সমিতি সমিতির মতো চলত। এই অভিনেতা আরো বলেন, সমিতি করা হয় যাতে সবার সঙ্গে সময়ে সময়ে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, খোঁজখবর নেওয়া যায়, সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো যায়, মিলমিশ থাকে, এমন উদ্দেশ্য নিয়ে। এটা একটি পরিবারের মতো। এখন আমি যদি আমার কথা বলি তাহলে বলব, আমি সারাবছরই কোনো না কোনো সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সবসময় সমিতিতে যাওয়ার সময় হয় না। হ্যাঁ, আমি কমিটিতে থাকি। থাকি এ কারণে, যারা সমিতি চালায় এবং সারাক্ষণ সময় দেয়, তাদের সহযোগিতা করার জন্য। শুটিং ও ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে আমার পক্ষে সার্বক্ষণিক সময় দেয়া সম্ভব নয়। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে যদি একের পর এক সিনেমা হতো, তাহলে সমিতির নির্বাচন এবং একে কেন্দ্র করে কাদা ছোড়াছুড়ি হতো না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মনে করি, নিজের পরিবারে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে ঘরের সমস্যার কথা বাইরে নিয়ে আসা উচিত নয়। এখন সমিতি নিয়ে যেসব আলোচনা, কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে, এতে কি আমাদের শিল্পীদের সম্মান বাড়ছে? বাড়ছে না। শিল্পীদের প্রতি দর্শকের আগ্রহ থাকা খুব স্বাভাবিক। ফলে তাদের আচার-আচরণ এমন হওয়া উচিত যাতে সুনাম ক্ষুন্ন না হয়। অনেকে বলেন, আপনার সমিতির প্রয়োজন নেই, আপনি নিজেই একটি সমিতি- এমন মন্তব্যের জবাবে ডিপজল বলেন, আমি এভাবে চিন্তা করি না। আমি মনে করি, সমিতির প্রত্যেক সদস্য আমার সহকর্মী, আমার পরিবারের সদস্য। সিনিয়র সদস্য হিসেবে তাদের খোঁজখবর নেওয়া আমার দায়িত্ব। আমার এই দায়িত্ববোধ থেকে যতটা সম্ভব তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এগুলো বলার বিষয় নয়। তবে এটুকু বলব, সমিতির যেকোনো সদস্যের সমস্যায় আমি পাশে আছি, থাকব। তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা সবসময় করব। তারা যাতে ভালো থাকে, এ চিন্তা সবসময়ই করি। এজন্য নেতৃত্ব দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। সদিচ্ছা থাকলে, নেতৃত্বের বাইরেও সদস্যদের পাশে দাঁড়ানো যায়। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল ও কাদা ছোড়াছুড়ি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা মানুষ ভালোভাবে নেয় না।