সময়ের আবর্তনে পাবনার সুজানগর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। এখন আর পৌষ পার্বণ, নবান্ন উৎসব, কিংবা বিশেষ কোন দিনে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভানার শব্দ শোনা যায়না। এমনকি শোনা যায়না সেই চির চেনা সংগীত “ও বউ ধান ভানেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া” ঢেঁকি নাচে বউ নাচে হেলিয়া দুলিয়া “ও বউ ধান ভানেরে। সত্যই গ্রাম বাংলার কৃষাণীদের সেই চিরচেনা ঢেঁকি এখন আর তেমন একটা চোখে পড়েনা। অথচ একসময় উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি কৃষক পরিবারেই ঢেঁকি ছিল। পরিবারের কৃষাণীরা সে সময় দৈনন্দিন ধান, গম ও জব ভানার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন। পাশাপাশি চিড়া ভানার মতো কঠিন কাজও ওই ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে পৌষ পার্বণ, নবান্ন উৎসব এবং সবেবরাতে পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতেই ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরী করা হতো। সে সময় গ্রামের বধূদের ধান ভানার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে সত্যই চারদিকে হৈ-চৈ পড়ে যেতো। তাছাড়া ওই সময় এলাকার বড় বড় কৃষকরা আশপাশের দরিদ্র নারীদের টাকা বা ধান দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা ভানার কাজ করাতো। অনেক দরিদ্র পরিবার আবার ঢেঁকিতে চাল ভানিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সে সময় ঢেঁকিতে ভানা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু চালের বেশ কদর ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আধুনীক মেশিনপত্র আবিষ্কারের কারণে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ সত্যই বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া সরকারিভাবেও ঢেঁকি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে গ্রাম-গঞ্জের দু’একটি বাড়িতে এখনও ঢেঁকি দেখা গেলেও অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবেনা বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রওশন আলী বলেন শুধু ঢেঁকি নয়, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী যেকোন কিছু সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।