নবম শ্রেণীর ছাত্র বোরহান উদ্দিন রাকিব। বর্তমান সময়ের প্রযুক্তির হাওয়া লাগে তার গায়েও। তাই তো বাবার কাছে বায়না ধরে একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে দিতে। যতই বায়না ধরুক এই অল্প বয়সে ছেলের হাতে মোবাইল তুলে দিতে একেবারেই নারাজ পিতা আপেল উদ্দিন। কিন্তু একসময় পিতৃ হৃদয় হার মানে সন্তানের আবদারের কাছে। কিনে দেন একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। কে জানত এই মোবাইলই যে ছেলের জীবনের মৃত্যুর কারণ হবে। রাকিবদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চানপুর গ্রামে। বাড়ির পাশেই আখাউড়া-সিলেট রেলপথ। বিকাল হলেই রাকিব মোবাইল নিয়ে ছুটে যেত রেল লাইনের ধারে। অন্যান্য বন্ধুদের সাথে সেও রেললাইনে বসে গেইম খেলত। দিনটি ছিল ২৬ অক্টোবর বিকাল বেলা। বন্ধুদের সাথে রেললাইনে বসে মোবাইলে গেইম খেলছিল সে। ট্রেন আসার শব্দ শুনে সবাই রেললাইন থেকে সরে গেলেও রাকিব মোবাইল গেইমে ছিল মশগুল। তাই তো ট্রেনের হর্নের শব্দ তার কানে পৌছেনি। এ সময় সিলেটগামী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে সে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়া সেকশনের, আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া -মন্দভাগ ও আখাউড়া-মুকন্দপুর রেলপথ থেকে গত এক বছরে ( ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত) ৪৫টি মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। তাদের মধ্যে শিশু দুই জন, নারী চার জন ও পুরুষ ৩৪ জন। নিহতদের মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নাম ও পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসাবে তাদের মরদেহ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় দাফন করা হয়। বাকি মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের দেওয়া তথ্য ও অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে উঠানামা, ছাদে ভ্রমণ, দুই বগির সংযোগস্থলে বসা, কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে লাইন ধরে হাঁটা, রেললাইনে বসে গেইম খেলা, রেল ক্রসিং পারাপার, ও অসতর্কতার কারণে দূর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ছাড়া ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও আছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজারুল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধারকৃত মরদেহের বেশির ভাগই ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া অসাবধানতার কারণেই এসব দূর্ঘটনা ঘটছে বলে তিনি মনে করেন।