ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পার হলেও রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ১১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এত বছরেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি বলে মনে করেন সুধীজনেরা। অন্যদিকে, যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলোও বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে অযতœ-অবহেলায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলেও, নেই ৬০টি প্রতিষ্ঠান। ফলে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে।
অপরদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চারঘাট উপজেলায় ১২টি কলেজ, ১০টি মাদ্রাসা, ৫৮টি মাধ্যমিক ও ১৩টি কারিগরিসহ মোট ৯৩টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৩৪টিতে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকপর্যায়ের ৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মিনার।
আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে তার মধ্যে কিছু শহীদ মিনার বছরের পর বছর পড়ে থাকে অরক্ষিত অবস্থায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীদের ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে শহীদ মিনার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শহীদ মিনার নির্মাণে শিক্ষা প্রশাসন, অভিভাবক ও স্থানীয় বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মত দেন তিনি।
চারঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান আলমাস বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা সত্যিই দুঃখজনক। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলে পাশাপাশি শহীদ মিনারও নির্মাণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা বরাদ্দ ও নকশা তৈরি করে পাঠিয়েছিলাম। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো বরাদ্দ আসেনি। তবে স্থানীয়ভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।’
চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনার করেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণকাজও চলছে। সব প্রতিষ্ঠানে হয়তো একবারে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না। তবে উপজেলা সভায় আলোচনা করে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে শহীদ মিনার নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।