চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জন, পানিতে ডুবে ৩শিশু এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর জন্য অসচেতনতা ও অসতর্কতাই দায়ী বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইতোমধ্যে জেলার ট্রাফিক পুলিশ গত ০৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বডি ক্যামেরা লাগিয়েছে। যানবাহন চলাচলের গতিবিধি এবং ট্রাফিক পুলিশের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এ ক্যামেরায়।
১৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামের মো: সিদ্দিকুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র মো: সামছুর রহমান (৩৫) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। নিহতের স্ত্রীকে প্রতিদিনের ন্যায় কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে নিয়ে আসার জন্য মোটরসাইকেল যোগে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কলারোয়ার যুগিবাড়ী বাজারে পৌঁছালে হঠাৎ তার বাম দিক থেকে একটা সাইকেল তাকে হালকা ধাক্কা দিলে তিনি মেইন রাস্তায় পড়ে যান। ঠিক ঐ সময় অপর দিক থেকে একটা দ্রুতগামী ট্রলি তার বুকের উপর দিয়ে উঠে যায়। পরে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এরআগে ১২ ফেব্রুয়ারি আশাশুনির কাদাকাটিতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে গোবিন্দ রায় (৬৪) নামের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিহত হন। এ ঘটনায় চালক সাতক্ষীরা শহর তলীর পারকুখরালি এলাকার নজরুল গাজীর ছেলে আমিরুল গাজীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত গোবিন্দ রায় পূর্বকাটাকাটি গ্রামের সূর্যকান্ত রায়ের ছেলে ও খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। একইদিন, সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মাছুদ সরদার (৫০) নামে একজন নিহত হন। একই সাথে আহত হন তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৪২)। নিহত মাছুদ সরদার বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন।
এরআগে ২ ফেব্রুয়ারি আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ীতে কাঁচামাল বহনকারী খাটবডি নছিমনের ধাক্কায় এক বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু নিহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের ইব্রাহিম খলিল তার ভাড়ায় চালিত নছিমন বোঝাই করে কাঁচামাল নিয়ে তালা উপজেলার দলুয়া থেকে কাদাকাটি বাজারে যাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় আগরদাড়ী রহিমীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে পৌঁছালে ঐ গ্রামের মাহমুদ আলী সরদারের প্রতিবন্ধী ছেলে শিশু আদনান (৮) রাস্তা ক্রসিং এর সময় ভ্যানের সামনের অংশে ধাক্কা খেয়ে চাকার নিচে পড়ে গুরতর আহত হয়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত জেলায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পানিতে ডুবে সহিদ নামে ৩ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সহিদ ওই গ্রামের সায়েম সরদারের ছেলে। ওইদিন দুপুরে বাড়ির উঠানে খেলা করছিলো শিশুটি। দীর্ঘ সময় বাড়ির লোকজন তাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে সহিদের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন। সেখান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
এরআগে ৬ ফেব্রুয়ারি আশাশুনিতে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। উপজেলা সদরের শ্রীকলস গ্রামের আবদুল জালাল গাইনের শিশু পুত্র নয়ন (১১ মাস) ভাটায় শ্রমিকদের বসবাসের জন্য টোং ঘরে রেখে পিতা-মাতা দু’জনই কাজ করছিল। সবার অজান্তে ওইদিন দুপুরে শিশু নয়ন হাঙ্গুর দিয়ে ঘরের বারান্দার পাশে বালতিতে রাখা পানিতে উবুর হয়ে পড়ে মারা যায়। একইদিন উপজেলার গুনাকরকাটি গ্রামের আবু তাহের গাজীর শিশু কন্যা আফিয়া (২) তার মায়ের সাথে চিলেডাঙ্গা গ্রামে মামা আবদুল মাজেদ সরদারের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মামার বাড়ির পাশে পুকুরে (খাদে) পড়ে মৃত্যুবরণ করে।
এদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি আশাশুনি উপজেলা দরগাহপুর ইউনিয়নের কালাবাগি বাজারে বিদ্যুতায়িত হয়ে হজরত আলী (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাজারে তার চায়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটে। ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামের মৃত মতলেব গাজীর ছেলে হযরত আলী গাজী (৪০) তার চায়ের দোকানে গিয়ে দোকানে থাকা পানি উঠানো বৈদ্যুতিক মটরের লাইন মেরামত করার সময় অসর্তকতা বশত: বিদ্যুতায়িত হলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।