ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের চর মানিকনগর গ্রামে ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন)আইন২০১৩ এর ধারা অমান্য করে মেসার্স কেবিসি ব্রিক্স নামে একটি ইটভাটা স্থাপনের তোড়জোড় চলছে। এর এক থেকে দুইশো গজের ভিতর রয়েছে একটি কবরস্থান, ঈদগাহ ও একটি প্রস্তাবিত বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থান, এর পাশেই রয়েছে চরমানিকনগর গ্রামের জনবসতি। এ ছাড়া রয়েছে ফসলি জমি। ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবী জানিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দা আবদুল আওয়াল। ইটভাটা নির্মাণকারীর দাবী,অবস্থানগত ছাড় পত্র নিয়েই কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের চর মানিকনগর গ্রামের মেঘনা নদীর তীরে মানিকনগর মৌজার ৫২.৫৩,৫৪ নং খতিয়ানভুক্ত ফসলী কৃষি জমিতে নবীনগর উপজেলার থোল্লাকান্দি গ্রামের আবদুল লতিফ,নরসিংদী জেলা সদরের খগেন্দ্র দাস,বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আগানগর গ্রামের মো. সেলিম মিয়া পার্টারশীপে এ ইটভাটা নির্মান কাজ শুরু করছেন। ওই এলাকায় ইটভাটা নির্মানাধীন কৃষিজমির পাশে একটি ঈদগাহ ও কবরস্থান রয়েছে এবং ওই গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে কোমলমতি শিশুরা পার্শবর্তী নাসিরাবাদ গ্রামে অবস্থিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে না চাওয়ার কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই গ্রামের শিশুরা, সে কারণে চরমানিকনগর গ্রামে ঈদগাহ ও কবরস্থানের পাশে একটি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মান করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। নিচু জমিতে লাগানো রয়েছে ইরি ধান। আধা কিলোমিটারের মাঝে রয়েছে জনবসতি।
ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন)আইন২০১৩ এর ধারা ও বিভিন্ন উপধারায় বলা হয়েছে,কৃষিজমি, জনবসতি ও জলাভূমির ১ থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্য ইটভাটা নির্মান করা নিষিদ্ধ থাকার পরও কেমন করে ওই স্থানে অবস্থানগত ছাড়পত্র পেয়েছে? এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগকারী কৃষক আওয়াল মিয়া বলেন, এখানে ইটভাটা হলে আমাদের কৃষিজমি নষ্ট হবে, এখানে আলু, ভাংরি,তরমুজ, বাদাম,সরিষা করা হয়,গবাদী পশু চড়ানো হয়, আশপাশের নিচু জমিতে ইরি ব্যুরো ধান করা হয়, এখনো ইরি ধান রয়েছে। ভাঁটা তৈরির জন্য ইট নেওয়া হয়েছে। এখানে ভাঁটা হলে এলাকার পরিবেশ নষ্টসহ বিভিন্ন রোগ জীবানো দেখা দিবে এবং শতাধিক পরিবার দারুণ সংকটে পড়বে। সরকারের কাছ আমাদের দাবী এ ইটভাটা নির্মান কাজ বন্ধ করা হউক। নতুবা কৃষিজমি রক্ষায় আন্দোলনে নামতে আমরা বাধ্য হব।
এ ব্যাপারে ইটভাটা নির্মানকারি মো. আবদুল লতিফ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। জমিগুলো পতিত ,এখানে কোন ফসল হয় না, তাই জমির মালিক কৃষকরা স্বেচ্ছায় আমাদের জমি ভাড়া দিয়েছে। জেলা থেকে গত ২৯ নভেম্বর ২০২১ সালে অবস্থানগত ছাড় পত্র পেয়ে কাজ শুরু করেছি। পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েই আমরা চুলায় আগুন দিবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুল আমিন বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনাপত্তি রিপোর্ট পাওয়ার পরই মেসার্স কেবিসি ব্রিক্সকে অবস্থানগত ছাড় পত্র দেওয়া হয়েছে,এখনো পরিবেশের কোন ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন, নবীনগরে গত এবছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছি, এ সময়ে আমি কোন ইট ভাটার নামে কোন রিপোর্ট দিয়েছি বলে মনে হয়না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোশারফ হোসেন বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি,বিষয়টি তদন্ত পূর্বক খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।