বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে বেশকয়েকটি স্থানে চোরাই বালুর অবাধ বেচাকেনা চলছে। মহাসড়কের পাশে সাইড রোড দখল করে চোরাই বালু স্তুপ করে রাখায় যানবাহন চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ভবন মালিক বা অন্যান্য কন্সট্রাকশনের কাজে নিয়োজিতরা প্রতারিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা চোরাই বালুর এসব বেচাকেনার স্পট বন্ধ করার দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পুংলী নামক স্থানে চোরাই বালু বেচাকেনার সবচেয়ে বড় স্পট। সেখানে দিন-রাত বালু বেচাকেনা হচ্ছে। ট্রাকে বহনকারী বালু নামিয়ে রাখা হচ্ছে- আবার সেই বালু অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়কের বেশকয়েকটি স্থানে একই পন্থায় বালু কেনাবেচা হচ্ছে। কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বড়বাসালিয়া গ্রামের আবদুল মান্নান দুলু, সাহাবুল ইসলাম সাইফুল, সোহেল মিয়া, সুমন মিয়া, সুজন মিয়া, ফেরদোস হোসেনসহ ১০-১২জন ওই স্পটগুলোতে বালুর ব্যবসা করে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে তারা ট্রাক চালকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে বালু কিনে রাখেন। তাই তাদের বালুর ব্যবসা অবৈধ নয়।
সরেজমিনে নাম প্রকাশ না করে এক চোরাই বালু ব্যবসায়ী জানান, তিনি ভূঞাপুরে বালুর পাশাপাশি ট্রাক থেকে সিলেটের লাল বালু কিনে রাখেন। পরে তিনি বিভিন্ন ক্রেতার কাছে কিনে রাখা বালু বিক্রি করেন। প্রতি ট্রাক সাদা বালু আড়াই হাজার টাকা ও লাল বালু ৫০ টাকা ফুট বিক্রি করে থাকেন। কম দামে বালু কেনার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। তাছাড়া মহাসড়কের পাশে স্পট হওয়ায় যাতায়াতে কোন সমস্যা হয় না। এক বালু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে অবৈধভাবে বালু কেনার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনিসহ বেশকয়েকজন দীর্ঘদিন ধরেই এই বালুর ব্যবসা করছেন। তারা বিভিন্ন ট্রাক চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওই ট্রাক চালকরা বালু বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের এখানে কিছু বালু নামিয়ে দিয়ে যান। নাম প্রকাশ না করে ট্রাক থেকে বালু কিনে নেওয়া এক ব্যক্তি জানান, অল্প খরচে তিনি প্রতি ট্রাক থেকে ৩০-৪০ ফুট বালু কিনে রাখছেন। এতে তার গাড়ি ভাড়া লাগছে না। তিনি আরও জানান, ট্রাকের চালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাই ভবন মালিকদের জন্য নিয়ে যাওয়া বালুর কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়ে যান। এতে ভবন মালিকরা প্রতারিত হলেও ট্রাক চালক ও তারা লাভবান হচ্ছেন।
ট্রাক চালক মকবুল হোসেন জানান, তিনি এক মালিকের ভবনের পাশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভূঞাপুর থেকে বালু এনেছেন। খরচের কিছু টাকার জন্য তিনি পুংলী স্পটে ৩০ ফুট বালু বিক্রি করে দিয়েছেন। আরেক ট্রাক চালক ছানোয়ার মিয়া জানান, তিনিও ভূঞাপুর থেকে বালু নিয়ে করটিয়া যাচ্ছেন। যাওয়ার পথে পুংলী স্পটে তিনি ৩০০ টাকায় সামান্য কিছু বালু বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ বেঁচে যাচ্ছে এবং একই সাথে এই বালুর ক্রেতার কোন গাড়ি ভাড়া লাগছে না। কিন্তু প্রতি ট্রাকেই বালু ৫০০ ফুটের কম মনে হওয়ায় তিনি ট্রাক চালককে জিজ্ঞাসা করেন। তখন ট্রাক চালকরা জানান, ঘাট থেকে বালু আনতে আনতে কিছু বালু রাস্তায় পড়ে যায়। ফলে কোন কোন ট্রাকে বালু কিছুটা কম হতে পারে।
ওই সাইড রোডে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক আবদুর রহিম, জাহাঙ্গীর, আবুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, তারা এ সাইড রোড দিয়ে প্রতিদিন এলেঙ্গা-টাঙ্গাইল চলাচল করেন। পুংলীতে রাস্তার উপর বালুর স্তুপ থাকায় সেখান দিয়ে যাতায়াতে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর এ আলম সিদ্দিকী জানান, পুংলীতে বালু ব্যবসা চলছে। ট্রাক চালকরা কেনার সময়ই ওভারলোড দিয়ে বালু আনেন। সেখান থেকে কিছু বালু খরচের জন্য বিক্রি করেন বলে তিনি ট্রাক মালিক সমিতির নেতাদের কাছ থেকে শুনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবেন।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাশ্বের আলম জানান, বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তিনি ইতোমধ্যে থানা পুলিশের সাথে কথা বলেছেন। দ্রুতই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।