টাঙ্গাইলের বাসাইলে অর্ধ কোটির অধিক টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই হেলে পড়ে সেতুটি। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি পূনর্নিমাণের কোন ব্যবস্থা হয়নি। বরং সেই আশ্বাসের মধ্যই আটকে আছে সেতুটি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ কাজ চলমান অবস্থায়ই নি¤œমানের নির্মাণের সামগ্রী নিয়ে উঠে নানা প্রশ্ন। এলাকাবাসীর অভিযোগ নি¤œমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করেই নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে সেতুটি উদ্বোধনের আগেই ২০১৮ সালের বর্ষায় সেতুটির নিচের মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়ার উপক্রম হয়। বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তদারকির উদাসিনতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এমন দায়সারা কাজ করেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, উপজেলা সদরের সাথে এলাকার প্রায় ১০-১৫টি গ্রামের মানুষের সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম এ সেতুটি। উদ্বোধনের আগেই সেতুটি হেলে পড়ে। মানুষ চলাচলের আগেই পরিত্যাক্ত হয় সেতুটি। ধসে পড়ার আশংকায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয় ভুক্তভোগী স্থানীয়রা। বর্তমানে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮টি সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়। এর মধ্যে বাসাইল উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে সাতটি সেতু রয়েছে। এ সাতটি সেতুর মধ্যে ওই সময় চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। বাকি তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। নির্মাণ সমাপ্তকৃত সেতুর মধ্যে উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ফুলকী-ফুলবাড়ি ভায়া নিড়াইল রাস্তার টেংরাখালী সেতুটি উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়ে। সেতুটির নির্মাণ কাজটি পায় মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটির কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষের দিকে সমাপ্ত হয়। সেতুটি নির্মাণের সময়েই রড, সিমেন্ট ও বালুসহ খুবই নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা মৌখিকভাবে বেশ কয়েক বার অভিযোগ জানায় বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের কাছে। কিন্তু ওই কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়েও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিফলে গেছে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকার এই প্রকল্প।
স্থানীয় এলাকাবাসী বাবুল মিয়ার অভিযোগ করে বলেন, সেতুটি নির্মাণের সময় স্পটে ঠিকাদারকে দেখা যায়নি। সে সময় নির্মাণ শ্রমিকের পরিবর্তে ধান কাটার অদক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে সেতুর কাজ করতে দেখা যায়। এসব অনিয়মের ব্যাপারে প্রকল্প কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
একই অভিযোগ স্থানীয় অনেকের তারা জানান, প্রকল্প কর্মকর্তার উদাসীনতা ও গাফিলতির সুযোগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে নির্মাণ কাজ শেষ করে। ফলে উদ্বোধনের আগেই সেতুটির এই বেহাল অবস্থা হয়। সরকারের এই ৫৪ লাখ টাকাই জলে গেলো। রয়েই গেলো জনগনের দুর্ভোগ। দায়িত্বের অবহেলায় সরকারি টাকার এমন অপচয় রোধে যেন নেই কারো মাথা ব্যাথা।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী জাহিদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাখাওয়াত হোসেন জানান, নির্মানের পরপরই বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোতের কারণে সেতুটি হেলে পড়ে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। ওই সময় প্রকল্প অফিসের প্রকৌশলীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পরিদর্শন করে গেছেন। বর্তমানে সেতুটি কোন পর্যায়ে নাই। পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। পরবর্তীতে আবার যদি বরাদ্ধ আসে তবেই সেতুটি পুনর্ণিমান করা যাবে।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, ফুলবাড়ি-ফুলকী ভায়া নিড়াইল রাস্তাটি আমার স্বপ্নের রাস্তা ইতোমধ্যে ওই রাস্তায় মাটির কাজ চলমান আছে। রাস্তাটির মাটির কাজ শেষ হলেই ওই এলাকার মানুষের চলাচল ও পানি প্রবাহ সচল রাখতে সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।