বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুল জব্বারের নামে ২০০৮ সালে তারই জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়াতে প্রতিষ্ঠা হয় ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানে শহীদের ছবি ছাড়া ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি নেই জাদুঘরের ভেতরে। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণ গ্রন্থাগারটিতে ৪ হাজারের অধিক বই রয়েছে। গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের পৈত্রিক ভিটার পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এখানেই রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শহীদ জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা বছর সরব না থাকলেও ভাষার মাসে মিলন মেলায় পরিণত হয় পাঁচুয়ার শহীদ আবদুল জব্বারের জন্মস্থান জব্বার নগরে। এখানে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত হয় অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। তবে দু:খজনক বিষয় ৪ হাজারেরও বেশী সংগ্রহ নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা গ্রন্থাগার ও জাদুঘর কোলাহলশূণ্য অলস হয়ে পড়ে আছে। বিশাল হল রুমে চেয়ার টেবিল ফাঁকা পড়ে আছে। মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায় কিছু দর্শনার্থী। ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।
শহীদ জব্বারের জন্মভিটার পাশে ৪০ শতক জায়গার উপর নির্মিত ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। আলমারিতে শোভা পাচ্ছে ৪ হাজার ১শ ৩০টি বই। অনেক দামি ও দুর্লভ বই রয়েছে। পুরো জাদুঘর গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আগে দৈনিক পত্রিকা রাখা হলেও এখন আর দৈনিক পত্রিকার পাঠকও আসে না বলে রাখা হয় না। গ্রন্থাগার দেখাশুনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট ৫টি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।
লাইব্রেরিয়ান মোঃ কায়সারুজ্জামান জানান, অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। নিয়মিতভাবেই গ্রন্থাগার খোলা হয়। ভাষার মাসে দর্শনার্থীরা এলেও বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন আসে না। তাই তাদের তেমন কোনো কাজ নেই।গত বৃহস্পতিবার বিকালে পাঠাগার ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু দর্শনার্থী আসছেন, তারা আশপাশ ঘুরে দেখলেও গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বই পাঠ করছে না। জাদুঘরের সামনে, শহীদ মিনার কিংবা ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঝোঁক বেশী তাদের। পৌর এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন রাহাত, রিজওয়ান সহ আরো অনেকেই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর দেখতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি এখানে নেই। শহীদ আবদুল জব্বারের উত্তরসূরীরা এখানে কেউ থাকে না বলে তাদের কারো সাথে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই। আরেক শিক্ষার্থী মাহিন বলেন, উপজেলা সদর থেকে সরাসরি যানবাহন না থাকায় আসা-যাওয়া করতে পরিবহন সঙ্কটে পড়তে হয়। কলেজ শিক্ষার্থী রিজওয়ান শাবাব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীসহ গফরগাঁওবাসীর দাবী ছিল আমাদের গর্ব, গফরগাঁওয়ের গর্ব ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের নামে গফরগাঁও একটি বিশ^বিদ্যালয় করা হউক। চারু শিল্পী জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে মাঝে মাঝে ছবি আঁকার জন্য আসা হয়। প্রকৃতির কূলে বসে মানুষের ছবি আঁকতে ভাল লাগে। কখনো শিল্প সংশ্লিষ্ট কিছু বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করি।
গফরগাঁও উপজেলা অফিসার মোঃ আবিদুর রহমান বলেন, এখানে নতুন যোগদান করে আমি ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। কিভাবে পাঠকদের আকৃষ্ট করা যায় এ বিষয়ে কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করা হবে।