বাংলাদেশে মানবপাচার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার গভীর রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আকর্ষণীয় পেশায় চাকরির কথা বলে, ক্ষেত্রবিশেষে টাকা দিয়ে নারীদের বিদেশে পাচার করে আসছিল চক্রটি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব জানিয়েছে, তাঁরা তরুণীদের আকর্ষণীয় পেশায় চাকরির কথা বলে লোভে ফেলে বিদেশে বিক্রি করে দিতেন। পাচারকারীচক্র সম্পর্কে র্যাব জানিয়েছে, গত এক বছরে কয়েক শ জনকে গ্রেপ্তারের পরও থেমে নেই চক্রের সদস্যরা।
জানা যায়, চক্রটি এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ জন নারীকে পাচার করেছে। বেশি পাচার করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ ছাড়া সৌদি আরব ও ওমানেও বেশ কিছু নারীকে পাচার করা হয়েছে।
আমরা জানি যে, গত বছর এক বাংলাদেশি তরুণীর যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছিল দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তখনই জানা যায়, দেড় হাজারের বেশি নারীকে ভারতে পাচার করা হয়েছে। তরুণী ও কিশোরীদের ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের টোপ দিয়ে পাচার করছিল। এই তরুণী ও কিশোরীদের ধর্ষণের পর নানা ভয় এবং মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আটকে রাখা হতো। মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও আতঙ্কে তাঁরা মুখও খুলতেন না।
আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ম্লান করে দিচ্ছে নারী পাচারের ঘটনা। অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানবপাচারকারী চক্রের বিস্তৃতির পেছনে বিচারহীনতাই দায়ী। দিনের পর দিন মামলার অগ্রগতি হয় না। দোষীদের আইনের আওতায় আনার হার একেবারেই কম। এমনকি মানবপাচারের ছয়-সাতটি মামলা থাকা সত্ত্বেও আসামির জামিন হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে খালাসও পেয়ে যান। পরে তাঁরা নতুন উদ্যমে একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
যদিও কখনো কখনো মামলা হয় কিন্তু পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অগ্রগতি হয় না। ভুক্তভোগী যে তথ্য দেন, তা সুবিচার লাভের জন্য যথেষ্ট নয় বলেও মনে করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। পাচারকারীচক্রকে প্রতিহত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা।