বগুড়ার শেরপুরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় নির্মিত বসতবাড়ী ভেঙে দিয়ে নদী তীর প্রতিরক্ষার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাহেববাড়ী বাঁধ এলাকার বিনোদপুর গ্রামে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কারো বাড়ী ভাঙা হয়নি। প্রতিরক্ষা কাজের স্বার্থে হয়তোবা তাদের বাড়ীর সাইড দিয়ে কাজটা হবে সেক্ষেত্রে বাড়ির আঙ্গিনার কিছুটা জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঙালী-করতোয়া-ফুলজোর-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং পুনঃখনন ও নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঙালি নদীর ডান তীরে বিনোদপুর ও শেরপুরের সাহেববাড়ী এলাকায় ৯০০ মিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে সাহেববাড়ীতে ৫০০ মিটার এলাকায় নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর। কাজ সমাপ্তির তারিখ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ১৩ মার্চ। সাহেববাড়ীতে নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ করতে গিয়ে তীরবর্তী ব্যক্তির মালিকানাধীন বসতভিটা কেটে রাস্তা করে যান চলাচলের ব্যবস্থা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বিনোদপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তÍ মোজাম ও জুলহক জানান, নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য ইতোপূর্বে এক দফা তাদের বাড়ী কাটা হয়েছে। এরপরে গত দু’দিন আগে আবারও তাদের কারো ঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে আবার কারও বাড়ির অনেকটা অংশ কেটে দিয়ে রাস্তা করেছে তাদের ব্লকের গাড়ী চলাচলের জন্য। একমাত্র সম্বল বাঁচাতে তারা একাধিকবার অনুরোধ এবং বাঁধা দিলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং মামলার হুমকি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ইমরান হোসাইন জানান, এর আগে তার বাড়ী থেকে ১২ ফুট জায়গা রাস্তার জন্য নিয়েছিলো। এরপর নতুন করে আবারও বাড়ি কেটে রাস্তা করেছে। তিনি নিষেধ করেছেন তবুও শোনেননি।
মোজাম নামের আরেক ব্যক্তি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রয়োজনে তার বাড়ীর অধিকাংশ জায়গা কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি গরিব মানুষ। মাথা গোঁজার ঠাঁয়টুকুও আর নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, নদীর যে প্রকৃত পজিশন ছিলো সিএস ম্যাপে সেই অনুযায়ী নদী আর নদীর জায়গায় নেই। যে কারণে সেখানে প্রতিরক্ষা কাজ করা হচ্ছে। যাতে মানুষের এক ইঞ্চি জায়গাও নষ্ট না হয়। সেখান থেকে কোন বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়নি। প্রতিরক্ষা কাজের স্বার্থে হয়তোবা তাদের বাড়ীর সাইড দিয়ে কাজটা হবে সেক্ষেত্রে বাড়ীর আঙ্গিনার কিছুটা জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরেও সেই জায়গা তাদেরই থেকে যাবে। আমরা শুধুমাত্র কাজ করে উঠে চলে আসবো। নদীর তীরটা তাদের বাড়ীর এত কাছে যে দুটো ব্লক বসাতে গেলেও তাদের ঘরের কিনারা বরাবর বসাতে হচ্ছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কখনো ল্যান্ড অ্যাকোয়ার করে প্রটেকশন দেয় না। এটা হলো এমারজেন্সি সেভিংয়ের জন্য। নদীর কারণে লোকজনের বাড়ীঘর ভেঙে যাচ্ছে। কাজটা না করলে আগামী ২ বছরে বাড়ী ঘর আর থাকবে না। কাজটা হলে ওই লোকগুলোরই বাড়ীঘর সেফ হবে। এজন্য কষ্ট হলেও কাজটা করে নেয়া দরকার। এখানে সরকার থেকে ভর্তুকি দেবার কোন সুযোগ নেই। তবে আমরা ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি লোকজনকে যতটা সেফ করে কাজ করা যায় সেভাবে করতে। এ ছাড়া উপায় বা বিকল্প কিছু দেখছি না।