একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের স্মরণে “ইচ্ছে পূরণ” নামে ব্যাতিক্রমী এক আয়োজন করেছে গোল্ডেন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মানবতার ফেরিওয়ালা ক্ষ্যাত যুবক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। সোমবার দিনব্যাপী ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ১০ জন এতিম ও অনাথ শিশুদেরকে নিয়ে এ আয়োজন করেন তিনি।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কয়েক এলাকার হত দরিদ্র ও পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ শিশুদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন উপজেলার নানা প্রান্তে। এ দিনে সুবিধা বঞ্চিত ওইসব শিশু ঘুরে বেড়ানো ও খাওয়াসহ যা যা বায়না করেছেন সেগুলোর সব ইচ্ছেই পূরণ করেছেন মোহাম্মদদ নিজাম উদ্দিন। হেসে খেলে আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে দিনটি কেটেছে শিশুদের। এতে চোখে মুখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তারা। আর এভাবে হেসে খেলে ঘোরার সময় তাদের দেখা মেলে নাগেশ্বরী পৌর সদরের এশিয়া মার্কেটে। সেখানে দেখা গেছে নিজাম উদ্দিন নামের ওই যুবক তার প্রতিষ্ঠিত গোল্ডেন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন নামে প্রিন্ট করা টি-শার্ট গায়ে উল্লাস করে ঘুরছে একদল অনাথ শিশু। তাদের কারো হাতে চিপস, কারো হাতে বিস্কুট, আবার কারও হাতে মিষ্টির প্যাকেট। এমন সময় তারা বড়াই খাওয়া বায়না করলে সাথে সাথে বড়াই কিনে দেন তিনি।
কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানায় তাদের কারও মা নেই, কারও বা বাবা নেই। আবার কারও বাবা মা কেউই নেই। তাদেরকে এভাবে ঘুরে বেড়ানোর মতো আপন বলতে কেউ নেই পৃথিবীতে। এর আগে এভাবে কোনোদিন আনন্দ ফুর্তি করে বেড়াতেও পারেনি কেউ। ভাগ্যে জোটেনি শহরের ভালো হোটেলে বসে খাবারও। তাদের এই ছোট্ট ইচ্ছেগুলো পূরণ হওয়ায় অনেক খুশি তারা।
ইচ্ছে পূরণ করতে আসা উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের ঠকটারী এলাকার মৃত শঙ্কর ঠাকুরের মেয়ে স্মৃতি এবং ইতি জানায় তারা ২ বোন, একজন তৃতীয় আরেকজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাবা মারা গেছে শিশু বেলাতেই। মা অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনোমতে চলে তাদের সংসার। ভালো কিছু খাওয়া-পরার সৌভাগ্য তাদের হয়নি কখনও। আজ নিজাম উদ্দিন তাদের ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে এসছেন। তারা ঘুরেছেন উপজেলার নানা প্রান্ত। দেখেছেন শহীদ মিনার এবং মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহিদদের। তৃপ্তিভরে খাবার খেয়েছে বড় হোটেলে। দেখেছে শহরের নানা হালচিত্র।
একই ইউনিয়নের সুখাতি বোর্ডঘর এলাকার মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (৮), এগারোমাথা এলাকার মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে রব্বানী (৯) জানায় তারা অনেক জায়গায় ঘুরেছে। অনেক আনন্দ করেছে। নিজাম ভাইয়ের কাছে যখন যা চেয়েছে তখন তা কিনে দিয়েছে। যখন যা খেতে চেয়েছে তখন তাই খাইয়েছে। ছবি তুলেছে। আজকের কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি তিনি। আজ অনেক মজা করেছে তারা।
গোল্ডেন ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নিজাম উদ্দিন জানায়, তিনি সব সময় অসহার ও দুঃখি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। তাদের বিপদে আপদে পাশে থাকতে পারলে ভালো লাগে তার। তিনি আরও জানায় তার বাবাও বেঁচে নেই। বাবা না থাকার কষ্টটা বোঝেন তিনি। তাই আজ ভাষা শহিদদের স্মরণে অনাথ শিশুদেরকে নিয়ে তাদের ইচ্ছে পূরণের এই সামান্য আয়োজন। এসব শিশুদের মেধা বিকাশে এ আয়োজনটুকু সহাহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা একটু আদর পেলে, ভালোবাসা পেলে কতটা খুশি হয় আজ দেখলাম। তাদের নিষ্পপ হাসিমাখা মুখ আমাকে পুলকিত করেছে। তাদের জন্য এটুকু করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। আর আমি চাই সবাই এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াক।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সালেকুল ইসলাম জানান, যুবক নিজাম উদ্দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ইচ্ছে পূরণে যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন তা প্রশংসনীয়। তার মতো সমাজের প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য ব্যাক্তিদের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাড়ানো উচিৎ।