কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে রাতের অন্ধকারে অন্তত ৩০ বাড়িতে হামলা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছে দূর্বৃত্তরা। বাধা দিতে গিয়ে হামলাকারীদের পিটুনিতে রক্তাক্ত জখম হয়েছে ১৫-১৬ জন নারী-পুরুষ। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৮ জনকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রোববার রাত আটটার দিকে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নারায়ণপুর ইউনিয়নের দক্ষিন ঝাউকুটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড দক্ষিন ঝাউকুটি গ্রামের শফিউল্ল্যার ছেলে নুর ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আবু হানিফ, মোন্নাফ মেম্বারগং এর সাথে একই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ, তার মামা রিয়াজুল ইসলামগং এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। এর একটি রিয়াজুল ইসলামের দেয়া মামলায় নুর ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আবু হানিফসহ প্রায় ২০-২২ জন রোববার সকালে জামিন নিতে কুড়িগ্রামে কোর্টে যায়। এই সুযোগে আমজাদ মেম্বারের পক্ষের প্রায় ৭০-৮০ জন মানুষ লাঠিসোটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ওইদিন রাত ৮ টার দিকে নুরইসলাম পক্ষের প্রায় ২৮-৩০টি বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ভাংচুর চালায়। ভেঙ্গে ফেলে মোটর সাইকেল। লুটতরাজ করে নিয়ে যায় টাকাণ্ডপয়সা, জমির দলিল, ধান-চাউল, কাপড়সহ ১৮ টি গরু। ৩টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। চোখের নিমিষেই সবকিছু গুড়িয়ে দিয়ে যাবার সময় তারা জমি থেকেও তুলে নিয়ে যায় একটি শ্যালো মেশিন। এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির লোকজনকে বেধরক মারধর করে। এতে রক্তাক্ত জখম হয় ১৫-১৬ জন নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে হাতেম আলীর স্ত্রী সবুরা বেগম (৪৮), শাহাবুদ্দিনের ছেলে আবুল হোসেন (৩৬), আকবর আলীর ছেলে আমীর হোসেন (৩৮), আবুল হোসেনের ছেলে রুপচাঁদ (১৫), আবদুর রহমানের মেয়ে কদভানু (৪৫), সফিউদ্দিনের ছেলে নুর হোসেন (৩৫), হাতেম আলীর সোমেদ আলী (২৬), জুরাইন আলীর ছেলে মোন্নাফ মেম্বারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আমীর হোসেন বলেন, বাইত্তে মানুষ কম আছিল। খাওন শ্যাষ কইরা ঘুমাইতে গেছিলাম। সেই সুম হেরা হামলা কইরা আমগোরে সব শ্যাষ কইরা দিছে। কিচ্ছু রাহে নাইক্যা। হাত জুড় কইরা কছিলাম কিন্তু হোনে নাই। মাথায় বারি দিয়ে ফেলাইয়া দিছে আমারে। তাগোরের মধ্যে একজন আমার পায়ে বাড়ি দিয়া ভাইংগা দিছে। তাগোর টানা হেচরায়, মাইরের চোডে কন পন্নের কাপড় খুইল্যা গেছে মাইয়া মানুষ গোরের। কদভানু বলেন, হেরা আমাগোরে ব্যাবাক জিনিষ নিয়া গেছে বাপু। আমিতে হেইডা কইতে গেলে পরে হেরা আমার মাথায় বারি দিয়া ফাডায়া দিছে। প্রায় একই রকম কথা জানান সকলেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হামলাকারী আমজাদ মেম্বার ও রিয়াজুল ইসলামের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নারায়নপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনা শুনে আমি সোমবার সেখানে যাই। হামলাকারীরা যেভাবে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে লুটতরাজ করেছে, মহিলা-পুরুষদের পিটিয়েছে তা দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। যারাই দেখেছে তারাই কেঁদেছে। মানুষ এতটা নৃশংস হতে পারে তা ভাবা যায় না। আজ ওই পরিবারের লোকজন কী খাবে, কী পরবে সেটুকুও তারা রেখে যায়নি। এমনকি তারা যাবার সময় জমি থেকে একটি শ্যালো মেশিন তুলে নিয়ে যায়। এসব বিষয়ে নিয়ে আমি আগামীকাল নাগেশ্বরীতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।
কচাকাটা থানার অফিসার ইনচার্জ জাহেদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ না করলেও ঘটনা শোনার পরেই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু এলাকাটি নদী বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নৌকার অভাবে তারা সেখানে পৌছাতে পারেনি। সোমবার সকালে পুলিশ সেখানে গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।