দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে অর্ধেকেরও বেশী চিকিৎসকের পদ শূণ্য। এরমধ্যেই আরো আটজন মেডিক্যাল অফিসারসহ বিভিন্ন পদের চিকিৎসককে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।
ফলে সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পরার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের সাথে কথা বললেও কোন সুফল মেলেনি। অথচ এ হাসপাতাল থেকে বদলীকৃত আটজনসহ একই আদেশে আরো দুইজনকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বদলীকৃত সব মেডিকেল অফিসার পদোন্নতি পেয়ে জুনিয়র কনসালটেন্ট হয়েছেন। কিন্তু তার হাসপাতালে এ ধরনের কোন পদ না থাকায় এখানে তাদের পদায়ন সম্ভব নয়। তাই মন্ত্রণালয় তাদের অন্যত্র বদলী করেছে। তবে মন্ত্রণালয় ইচ্ছে করলে তাদের অন্যত্র বদলী করলেও এখানে সংযুক্তির মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাবার বিধান আছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এক হাজার শয্যার শেবাচিম হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৮শ’ রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। কোন কোন সময় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারও অতিক্রম করছে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও বাগেরহাটের রোগীরা পর্যন্ত এ বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য আসেন। ফলে এ হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে আরো কমপক্ষে চার হাজার রোগী চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহন করছেন। কিন্তু নিকট অতীতের পাঁচশ’ শয্যার এ হাসপাতালটির জনবল মঞ্জুরী বৃদ্ধি না করেই এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীর অভাবে রয়েই গেছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচশ’ শয্যার মঞ্জুরীকৃত ২২৪ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১১০ জনের মতো। কিন্তু সেখান থেকেও আট জনকে বদলী করায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ১০ জন মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে এখন মাত্র একজন কর্মরত রয়েছেন। গোটা হাসপাতালে ডেন্টাল বিভাগের একমাত্র জুনিয়র কনসালটেন্টের পদে কোন চিকিৎসকই নেই। রেজিষ্ট্রারের ৩৩ জন চিকিৎসকের ১৫টি পদই শুণ্য। ৬৬ জন সহকারী রেজিষ্ট্রার পদের ৪৭টি পদ শুণ্য। এ ছাড়া হাসপাতালের ৪৬ জন মেডিকেল অফিসারের ২০টি পদেই কোন জনবল নেই। এমনকি নব সৃষ্ট ২০টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ছয়জন। ২০ জন ইনডোর মেডিকেল অফিসারের আটটি পদ শুণ্য। বিশাল এ হাসপাতালে মাত্র একজন সিনিয়র প্যাথলজিষ্ট থাকলেও চারজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্টের আছেন দুইজন।
অতিসম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে শেবাচিম হাসপাতালের আটজন ছাড়াও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালেরও একজন চিকিৎসককে বদলী করায় সেখানেও সংকট ঘনিভুত হতে চলেছে। ৩২ জন চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত মহানগরীর এ হাসপাতালটিতে আগে থেকেই নয়টি পদ শুণ্য ছিল। আরো একজনকে বদলীর ফলে একশ’ শয্যার ওই হাসপাতালটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পদই শুণ্য হয়েছে।