জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নে তিন মাসের সন্তানকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যার ঘটনার রেশ কাটকে না কাটতেই পার্শ্ববর্তী খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ৪৩ দিন বয়সের কন্যা সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছে ঘাতক মা।
ঘটনার পর থানা পুলিশের তদন্তে অভিযুক্ত হিমা আক্তারকে (২৬) ছয়দিন পর আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দ্বায় স্বীকার করেন। পরবর্তীতে তাকে (হিমা) আদালতে সোর্পদ করার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে হিমা আক্তার ১৬৪ ধারায় আদালতের বিচারকের কাছে সন্তান হত্যার নির্মম ঘটনা বর্ননা করেন।
বুধবার সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী মডেল থানার এসআই হারুন-অর রশিদ ঘাতক হিমা আক্তারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে বলেন, অতিরিক্ত কান্না করায় অতিষ্ঠ হয়ে হিমা আক্তার তার ৪৩দিন বয়সের শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা করে। শেষে আত্মরক্ষার্থে শিশুর মরদেহ পুকুরে ফেলে দিয়ে সবাইকে জানান তার মেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মোক্তার মেলকারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ২০১৬ সালে একই উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের মৃত হালিম আকনের মেয়ে হিমা আক্তারকে সামাজিক ভাবে বিয়ে করেন। তাদের তিন বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বার হিমা আক্তার অন্তঃস্বত্তা হলে মায়ের কাছে বাদুরতলা গ্রামে আসেন। সেখানে ৪৩ দিন আগে হিমা আক্তার একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হিমা আক্তার বলেন, তার শিশু কন্যা খাদিজা ইসলাম রুকাইয়া জন্মের পর থেকেই অতিরিক্ত কান্না করতো। ঘটনারদিন গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বিকেলে শিশু কন্যার কান্না থামাতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে গলা টিপে ধরে। এতে তার মেয়ে মারা যায়। পরে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মেয়ের মরদেহ পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়া হয়। কিছু সময় পর মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কান্না শুরু করেন। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে।
থানার এসআই হারুন-অর রশিদ বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে ধারনা করা হয়। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে গভীর তদন্ত শুরু করলে হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। সোমবার রাতে শিশুটির মা হিমা আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি তার শিশু কন্যাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় শিশুর বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘাতক হিমা আক্তারকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। নিহত শিশুর বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, হিমা আক্তার মানসিক ভারসাম্যহীন নয়; সে সম্পূর্ন সুস্থ একজন মানুষ। কিন্তু কেন সে তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করল, সেটা বুঝতে পারছি না।
এর আগে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামে ছালেহা বেগম (৩৪) নামের এক নারী তার গর্ভের সাড়ে তিন মাস বয়সের ছেলে জুবায়ের তালুকদারকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ঘাতক ছালেহাকে পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করেন। ছালেহা বেগম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।