তিস্তা নদী বিধৈৗত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপোজলার ০৬ ইউনিয়নই ভয়াল তিস্তা নদীর আগ্রাসি ভাঙ্গণে দীর্ঘ ৩ যুগ থেকে বিলীন প্রায়। ওই অঞ্চলের মানুষদের প্রায় সকলেই ভিটে-মাটি, বসত বাড়ী, জমি-জিরাত হারিয়ে নিঃস্ব। নিঃস্ব এ সকল মানুষদের কেউবা আশ্রয় নিয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেরিবাঁধ, কেউবা চলে গেছে-হাত-পা নিয়ে অন্য জেলায়।
আবার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের আত্মীয়স্বজন বা অন্যের বাড়িতে। আশ্রিত এসকল মানুষের নিজস্ব মাথাগোজার নেই কোন ঠাঁই। অন্যের বাড়িতে জির্ণ-সির্ণ ঘর উত্তোলন করে কোন রকমে মাথার গোজার ঠাই নিলেও এদের জীবন সংসার চলে ভিক্ষাবৃত্তি আর কায়্যিক শ্রম বিক্রি করে। প্রত্যেক পরিবারে ২-৩ জন সদস্য থাকলেও অনেক সময় তারা যেন হয়ে পড়েন ‘কর্মহীন জীবন কাফনে মোড়ানো একেকটি জীবন্ত লাশের মত’। সম্প্রতি ৬ ইউনিয়নে জেগে ওঠা চরে কিছু পরিবার আশ্রয় নিলেও তাদের নেই কোন নিজস্ব ঘর-বাড়ি। কোন রকমের জীবন সংসার করছেন তারা। এ অবস্থা চলতে থাকা পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোষণা আসে, অসচ্ছল, দুঃস্থ্য, অসহায় ও ভূমিহীনদের জন্য আবাসস্থল তৈরি করা। ভূখা-নাঙ্গা এসকল মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এসকল মানুষের জন্য ঘর তৈরির বরাদ্দ মেলে। এ উপজেলায় ৪’শ ৭২টি ঘরের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল-মারুফ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল অসহায় পরিবারের খোঁজে মাঠে নামেন। বিভিন্ন ভাবে জরিপ চালিয়ে শ্রেণি ভেদে ৪’শ ৭২টি পরিবারের নাম তালিকা তৈরি করে রাতদিন পরিশ্রম আর সার্বক্ষনিক তদারকির মাধ্যমে ঘরগুলো নির্মাণ শুরু করেন। ইতোমধ্যে অনেকে মুজিব শতববর্ষ ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীতে ঘরের চাবি বুঝে পেয়েছেন সাথে ০২ শতক জায়গাও। বাকী ঘরগুলো সার্বিক তত্বাবধানের মাধ্যমে নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। মান সম্পন্ন এসকল ঘর যারা পেয়েছেন তাদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। ঘর পাওয়া দুঃস্থ্য হতদরিদ্র রামভদ্রের আছিয়া বেগম অশ্রসজল নয়নে জানান, আমরা এতদিন জির্ণসির্ণ নাম মাত্র ঘরে ঝর-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে জীবন নির্বাহ করছিলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এত ভাল মানুষ যে, ঘর করে দিলেন জমিও দিলেন ০২ শতক। আল্লাহ্ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হায়াত দারাজ করুক। তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের মত যারা রয়েছেন তারাও ঘর পাবে। ঘরের চাবি হাতে পেয়ে মনে হয়েছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। মাথা গোজার ঠাই পেয়েছি সংসারও চলবে-ইনশাআল্লাহ। ঘর পাওয়া তারাপুর ইউনিয়নের হামিদা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি নতুন ঠিকানা পেয়ে বলেন ‘মুই এতদিন মানুষের বাড়িতে আছিনু, এলা মোর নিজের ঘর হইলো, যাই মোক ঘর দিল তাকে আল্লাহ অনেক দিন বাছি রাকুক, মুই নামাজ পড়ি দোয়া করম ফি দিনে’। অপর ভুক্তভোগী সুখবালা জানান, ‘তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে ভিটা মাটি হারিয়ে দুইযুগ ধরে বেরী বাঁধে আশ্রয় নেই। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পেয়ে মুই এত খুশি যে হামার প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে আল্লাহ্ তাক বেঁচে রাখুক’। এমনি অনেক ভুক্তভোগী জানান তারা জীবনে কখনো ভাবতে পারে নাই পাকা বাড়ি হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে স্বপ্ন পূরণ করে দিল। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতী জানান, বিশুদ্ধ পানিয় জল ও স্যানিটেশনের ভাল ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
এনিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘর বরাদ্দ ও নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করেছি এবং করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল-মারুফ’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, সরকারী নির্দেশনা অনুসরণ করেই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বা হবে। ঘরে আশ্রিতদের জন্য ০২ জমি বাড়তি দেওয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানিয় জল ও উন্নত স্যানিটেশনের ব্যাবস্থাও করা হবে ইনশাআল্লা।