পতিত জমিতে সেচ সুবিধা দিয়ে আবাদের আওতায় এনে
কৃষিতে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে প্রায় দশ কিলোমিটার খাল খনন করা হচ্ছে:
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে। স্থানীয় এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া
চৌধুরীর নামে বরাদ্দকৃত টিআর-কাবিটা’র অর্থায়নে উপজেলার বরুয়াজানি গ্রাম
থেকে ভারত সীমান্তবর্তী তারানী গ্রাম পর্যন্ত এলাকাজুড়ে চলছে ‘ব্রজমালা’
নামে এ খাল খননের কাজ।
সূত্র জানায়, স্থানীয় এমপির নামে বরাদ্দকৃত টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিটা
(কাজের বিনিময়ে টাকা) এ দুটি প্রকল্পের অর্থায়নে ‘ব্রজমালা খাল’ খননের
উদ্যোগ নেওয়া হয়। বরুয়াজানি থেকে বিশগিরিপাড়া, রামচন্দ্রকুড়া, কালাকুমা ও
তারানী গ্রামের বুকচিরে সর্ব উত্তরে ভারতঘেঁষা পাহাড়ি নদী ভোগাই পর্যন্ত
প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে খাল খনন। একসময়ের ভরাট হয়ে যাওয়া
‘ব্রজমালা খাল’ পুনখননের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট এবং বর্ষা
মৌসুমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন
স্থানীয় কৃষকরা। দুইটি আলাদা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে
সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম বাজেটে এত দীর্ঘ খাল খননও যেন সবাইকে
তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
খালটি খনন করে ভাটিতে বরুয়াজানি গ্রামের বুকচিরে বয়ে যাওয়া দর্শা নদী বা
খালে সংযোগ দেওয়ার ফলেদর্শা খালে যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উত্তরে ভারতের তুরা থেকে বয়ে আসা ভোগাই নদী থেকে সেচ পাম্পের মাধ্যমে
পানি এনে তা ‘ব্রজমালা খালে’ ফেললে এ খালটি যেমন সচল হবে। তেমনি এ পানি
ভাটিতে দর্শা খালে গিয়ে প্রবাহিত হয়ে দর্শার যৌবন ফিরিয়ে দেবে।
‘ব্রজমালা খাল’টি খননের ফলে উপজেলার কাকরকান্দি ও রামচন্দ্রকুড়া এ দুটি
ইউপির অন্তত পাঁচ গ্রামের মানুষ সেচ সুবিধা পাবে। বিশেষ করে, কালাকুমা,
রামচন্দ্রকুড়া, বিশগিরিপাড়া ও বরুয়াজানি এ চার গ্রামের কৃষক সেচ সুবিধার
মাধ্যমে ধানসহ সবজি উৎপাদনে এ খালটি ব্যবহার করতে পারবেন।
অপেক্ষাকৃত উঁচু কালাকুমা, রামচন্দ্রকুড়া, বিশগিরিপাড়া ও বরুয়াজানি গ্রাম
সবজি আবাদের জন্য উল্লেখযোগ্য এলাকা। খালটি খননের ফলে সেচ সুবিধা বঞ্চিত
এসব গ্রামে সবজি আবাদের পরিমাণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা কৃষি বিভাগ ও
স্থানীয়দের। পাশাপাশি এলজিইডি’র মাধ্যমে খালটির দুই অংশে স্লুইচ গেইট বা
জলকপাট নির্মাণ করে পানি ধরে রাখার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে সূত্র
জানিয়েছে। এতে করে সেচ সুবিধার সঙ্গে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়লে পাহাড়ি
এলাকায় মাছের যোগান আসবে বলেও প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বিশগিরিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, খালটি খননের ফলে আমাদের
এলাকায় সেচ সুবিধা বাড়বে। ফলে সবজি আবাদ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে মাছের আবাদ।
বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে স্থানীয় কৃষি বিভাগও বলছে, স্লুইচ গেইটের
মাধ্যমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হলে সবজি আবাদে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি
পাবে।
তবে খালটি খনন করতে গিয়ে তারাণী গ্রামের বেশকিছু রেকর্ডীয় জমি খালের
আওতায় আসায় কৃষকরা পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। খালটি খননের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বৃহৎ স্বার্থে
খালটি খনন করা হচ্ছে। তদুপরি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কথা মাথায় রেখে তাদের
পুনর্বাসনের কথা ভেবে দেখা হচ্ছে।