মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উদীয়মান ক্ষুদ্র শিল্প পোল্ট্রি খামার ধ্বংসের পথে এগো”েছ। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা পোল্ট্রি খামারীরা। ইতিমধ্যেই শতকরা ৭০ ভাগ খামারী তাদের মূল পুঁজি হারিয়ে এই ব্যবসা গুটিয়ে বসে রয়েছন বলে জানা গেছে। উদ্যোক্তারা সম্পূর্ণরূপে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন এই খাত থেকে। অথচ এই খাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বড় বড় প্রাণী খাদ্যের দোকান। অনেক খামারি তাদের ব্যবসার লোকসান গুনতে গুনতে ব্যাংক ও মহাজনের খাতায় আজ মোটা অঙ্কের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) বেশকিছু খামার সরজমিন পরিদর্শন করে জানা যায় জুড়ী উপজেলার অনেক খামার মালিক লাখ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্র¯’ হয়েছেন। প্রসিদ্ধ খামার ব্যবসায়ী বেলাগাও গ্রামের হারিস মোহাম্মদ জানান একসময় অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিন হাজার লেয়ার মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে খামারে লাভের মুখ দেখলেও গত করোনা মহামারীর প্রথম ধাপে ডিমের মূল্য কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবারও এ শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যা”েছন তিনি। অপর খামারী উপজেলার বাছিরপুরের শাহজাহান ভূঁইয়া জানান, তিন হাজার ব্রয়লার খামার করে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্র¯’ হয়েছেন তিনি। করোনার প্রথম ধাপে হঠাৎ করে বাজারে ব্রয়লারের দাম পড়ে যাওয়ায় তিনি বাকীতে ৫০ টাকা কেজি দরে মোরগ বিক্রি করতে বাধ্য হন। ব্যাংকে দশ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও উপজেলার বেলাগাও গ্রামের আহমদ আলীর পুত্র আবদুল খালেক তিন হাজার লেয়ারের সেট থেকে ত্রিশ লাখ টাকা, তার ভাই তোতামিয়া এক হাজার মুরগির সেট থেকে হারিয়েছেন দশ লাখ টাকা, সদ্য নির্বাচিত ইউপি সদস্য আবুল কাশেম আড়াইহাজার এর সেট থেকে পঁচিশ লাখ টাকা, আবদুল হান্নানের পুত্র ফারুক মিয়া দেড় হাজারের একটি সেট থেকে হারিয়েছেন পনের লক্ষ টাকা, সাদত আলীর পুত্র আব্বাস আলী এক হাজারের একটি সেট থেকে হারিয়েছেন দশ লাখ টাকা, মৃত সিকান্দর আলীর প্রবাস ফেরত পুত্র ফরিদ মিয়া এক হাজারের একটি সেট থেকে হারিয়েছেন দশ লাখ টাকা, একই বাড়ীর ফয়েজ আলীর পুত্র রুবেল মিয়ার এক হাজারের সেট থেকে দশ লাখ টাকা, মৃত আবদুস সালাম এর পুত্র আবুল কালাম এক হাজারের একটি সেট থেকে হারিয়েছেন দশ লাখ টাকা। উদ্যোক্তারা লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন ভয়ে আতঙ্কে আর এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে সাহস পা”েছন না। ফলে উপজেলার একটি সম্ভাবনাময় শিল্প ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যা”েছ। উপজেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারিস মোহাম্মদ জানান অত্র উপজেলায় প্রায় আড়াইশ খামার রয়েছে। আমাদের খামারগুলোতে উৎপাদনের তুলনায় উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭শ টাকা। এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৩শ থেকে ২৩শ পঞ্চাশ টাকা। সেই হারে উৎপাদিত মালের মূল্য তেমন পাওয়া যা”েছ না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান সরকার খামারীদের উৎসাহিত করতে কিছু প্রণোদনা দিয়েছেন। তা ক্ষতিগ্র¯ে’র তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তাছাড়া পুঁজি হারিয়ে খামার মালিকরা আজ দিশেহারা। এখন ¯’ানীয় ব্যাংক গুলো যদি সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে এগিয়ে আসতো তাহলে এক ঝাঁক তরুণ প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আবার উপজেলায় এ শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াতে পারতো। তিনি এ ব্যাপারে সরকারসহ ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাছিন আহমেদ চৌধুরী জানান, করোনাকালীন সময়ে উপজেলার ২৫২ জন পোল্ট্রি ও ডেইরী খামারীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক তহবিল থেকে উপহার স্বরূপ ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। খামারীরা যাতে নতুন করে ঘুরে দাড়াতে পারেন সেইজন্য সহজ শর্তে ঋণও প্রদান করা হ”েছ।