আগামী ১ জুলাই থেকে ওয়াসা ২০ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চাইছে। তবে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুল্য বাড়ানো অযোক্তিক। ওয়াসার অদক্ষতা আর দুর্নীতির কারণে পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। ২০ শতাংশ যে সিস্টেম লসের কথা বলা হচ্ছে, তা মুলতঃ ওয়াসার কমকর্তা ও কর্মচারিদের দুর্নীতির ফল। ৫ শতাংশের ওপর সিস্টেম অদক্ষতার সামিল। এখন ঢাকায় পানির প্রতিদিন চাহিদা কমবেশি ২৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের দাবি করছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৩ বছরে ১৪ বার ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যেও গত দু'বছরে ওয়াসা পানির দাম ৩১ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন আবারও ২০ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে নানা যুক্তি তুলে ধরছে ওয়াসা। কিন্তু তাদের সিস্টেম লসের বিষয়টি তারা সামনে আনছে না। ঢাকা ওয়াসার ২০২০-২১ অর্থ বছরের নিরিক্ষা প্রতিবেদন বলছে, শুধু পানি ও সুয়ারেজ বিল বাবদ ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পানির বিল বাবদ আদায় হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাকিটা সুয়ারেজ বিল বাবদ আয়। ট্যাক্স সহ অন্যান্য সব খরচ বাদ দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসার লাভ হয়েছে ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বছর শেষে ঢাকা ওয়াসার সঞ্চিত মুনাফার পরিমাণ ৮৯২ কোটি টাকা। সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান লাভে থাকার পরও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অযোক্তিক।
এদিকে পাইকারি ও খুচরো বাজারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতোমধ্যে জমা পড়েছে জ¦ালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এর্নাজি রেগুলেটরি কমিশনে (বিই আরসি)। আগামী ২১ মার্চ থেকে গ্যাসের দাম বাড়াবার ওপর গণশুনানি শুরু হবে। এরপর হবে বিদ্যুতের দাম বাড়াবার শুনানি। এর আগে নভেম্বরে বেড়েছে জ¦ালানি তেলের দাম। ফলে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বেড়েছে। যাতায়াত খরচও আকাশ ছোয়া। এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ার ফলে জনগণের জীবন যাত্রা ব্যায় আরও বেড়ে যাবে।
চাহিদা না থাকায় সরকার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছে না। কিন্তু ভাড়া বাবদ টাকা ঠিকই গুনতে হচ্ছে সরকারকে। গত এক দশকে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের মতই সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও সমন্বয়হিনতা পেয়ে বসেছে গ্যাস খাতকেও। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে চড়া দামের তরলিক্রিত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি)। ফলে বারবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। আর এর চাপ সহ্য করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
আসলে বিদ্যুতের চাহিদা প্রাক্কলনে সরকারের ভুলের খেসারত দিচ্ছে ভোক্তারা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে চাহিদার বিরাট পাথক্য দেখা যাচ্ছে।এর ফলে অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পেছনে সরকার যে টাকা ব্যায় করছে,তা ভোক্তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। ভোক্তার ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপালে সমাধান হবে না, ভোক্তা তো এর জন্য দায়ী নয়। অন্যদিকে একটি গোষ্ঠী সরকারকে গ্যাস অনুসন্ধান করতে না বলে আমদানির দিকে নিয়ে সেই খরচ ভোক্তাদের কাছ থেকে নিতে চাচ্ছে। গ্রাহকদের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আয় রোজগার বাড়ছে না। ফলে জনজিবনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম না বাড়িয়ে জনজিবনে স্বস্থি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। অন্যের অদক্ষতা আর ভুল পরিকল্পনার দায় কেন আমজনতা বহন করবে?