নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের দারোয়ানী শাহপাড়া গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৮)। পেশায় একজন ভ্যান চালক। পাশাপাশি করেন চা ব্যবসা।তার চোখের সামনে ট্রেন দুর্ঘটনা। ৪ জন মানুষের মৃত্যু। সেদিনের কথা কোনক্রমে ভুলে যেতে পারেনি সে। তাই ঠিক করেন নিজ উদ্যোগে পাহারা দেবেন অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রক্ষার কাজ। ট্রেন আসলেই রেলক্রসিংয়ে বাঁশ বাঁধিয়ে দেন ও কলার পাতা উড়িয়ে সিগনাল দেন তিনি।
কারণ তার চোখের সামনে গত ২৬ জানুয়ারী সকালে দারোয়ানী রেল স্টেশনের শাহপাড়ায়। সেখানে গেটম্যান না থাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ইজিবাইকের চার যাত্রী উত্তরা ইপিজেডের নারী শ্রমিক মারা যান। এ সময় চালকসহ আরো গুরুত্বর আহত হন চারজন।
এ ঘটনা দেখে স্বেচ্ছায় রেলক্রসিংয়ে মানুষ পারাপারের দায়িত্ব নেন আলমগীর। ঘটনার পরদিন থেকে ট্রেন আসার আগে দুই পার্শ্বে বাঁশ বেঁধে রেলক্রসিং বন্ধ করে রাখেন। তাঁর এমন মহৎ দায়িত্ব পালনে সন্তুষ্ট নিজের পরিবার ও স্থানীয়রা।
আলমগীরের স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, মোর স্বামী রেল গেটের দিন রাত পাহাড়া দেন। স্বামী আগোত ভ্যান চালাইছিল এখন রেলক্রসিং দেখি বেড়ান। এখন কামাই রোজগার নাই। ছোট একটি চা দোকান সেটি মুই চালাছো। দোকান থাকি যা আয় হয় তাক দিয়ে সংসার চালাও। হামার অভাব হইলেও মোর স্বামী রেলক্রসিংয়োত বাঁশ দিয়ে যে কাজ করেছে তাতে হামরা খুশি।
এ বিষয়ে আলমগীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মোর চোখের সামনোত ইজিবাইকোত ট্রেনের ধাক্কায় উত্তরা ইপিজেডের চারজন নারী শ্রমিক একে সাথে মইল, আরো চাইর জনের ঠ্যাং পাও ভাঙ্গিয়া পঙ্গু হয়া পড়ি আছে। মানুষ এ্যাংকরিয়া জোন আর না মরে, মুই এখন গেটোত বাঁশ টাঙ্গিয়া বসি থাকো। মুই মানুষের ট্রেন থাকি জীবন বাচাইম, এইটাই মোর শান্তি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন ইসলাম, রাবেয়া বেগম বলেন, রাত দুইটা,ভোর পাঁচটা এবং দিনের মধ্যে ট্রেন আসার আগেই রেলক্রসিংএ হাজির হন আলমগীর। তিনি আগে ভ্যান চালক ও ছোট একটি চা দোকান করতেন। এখন সব বাদ দিয়ে শুধু মানুষকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে বিনা বেতনে রেলক্রসিংয়ে বাঁশ লাগিয়ে দেন ও কলার পাতা উড়িয়ে সিগনাল দেন।
সোনারায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম শাহ বলেন,রেলক্রসিং মানুষের মরণ ফাঁদ।নিঃসন্দেহে আলমগীরের এটি একটি মানবিক কাজ। তার জন্য আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, এটি নিঃসন্দেহে ভাল কাজ। তাকে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
নীলফামারী রেল স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল রহমান রতন জানান, নীলফামারীতে রেলক্রসিং রয়েছে ৩৮টি এর মধ্যে গেটম্যান আছে ১২টিতে। অবশিষ্ট ২৬টি অরক্ষিত।