এতে কোন সন্দেহ নেই যে, করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। অনেক দেশের অর্থনীতি পড়ে গেছে বিপর্যস্ত অবস্থায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিও নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। বহু মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।
এই কঠিন সময়ে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাঁদের পুঁজি হারিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা মানুষ। ফলে তিন কোটিরও বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্রের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম। এসব কারণে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বহুলাংশে ব্যাহত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ২০১৮ সালে ছিল দুই কোটি ৪০ লাখের মতো, আর ২০২০ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ২০ লাখে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ২০২০ সালের জরিপেও উঠে এসেছে, করোনাকালে ১৫ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার এবং ২৪ শতাংশ শহুরে পরিবার তাদের খাদ্যগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
করোনা মহামারি শুরুর পর লকডাউন কিংবা কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। রীতিমতো বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ফুটপাতের হকারসহ বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এ সময়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ক্ষুদ্র কৃষকরাও এ সময়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন। তাঁরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সিপিডির এক জরিপ অনুযায়ী মহামারির শুরুতে ৬১.৫ শতাংশ কর্মজীবী তাঁদের কাজ হারিয়েছিলেন। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক জরিপে উঠে এসেছিল, আত্মনির্ভরশীল কিংবা নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেনÑএমন প্রায় ৭৯.৭ শতাংশ তরুণের মাসিক আয় কমে যায়। আর চাকরি করেন এমন ৫৭.৪ শতাংশ তরুণের বেতন বা আয় কমে যায়।
এটি স্পষ্ট যে, খাদ্যে আমাদের দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাহলে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে কেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে খাদ্যের ঘাটতি যতটা না আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে অব্যবস্থাপনা। বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের নানা রকম সিন্ডিকেট প্রায় সময়ই বাজার অস্থির করে রাখে। ইচ্ছামতো পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সরবরাহব্যবস্থার দুর্বলতাও বাজারে সংকট সৃষ্টি করে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাই সরকার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নিয়ে কাজ করবে এটাই প্রত্যাশা।