বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বেহিসাবি ইটখোলা। দেশের যত্রতত্র অবৈধভাবে গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটখোলা। বৈধ ইটখোলা বা সরকারের অনুমতি নিয়ে পরিচালিত ইটখোলার সংখ্যা যত, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রয়েছে অবৈধ ইটখোলা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায়, কুষ্টিয়ায় ইটখোলা আছে মোট ১৯১টি। এর মধ্যে ১৭১টিই অবৈধ।
দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ইটখোলা নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছে, যা বায়ুদূষণ করছে মারাত্মকভাবে। কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করে। ফসলি জমি থেকে ‘টপ সয়েল’ বা ওপরের উর্বর মাটি কেটে এনে ইট বানানো হয়। এতে জমির উর্বরতা কমে যায়, ফসল উৎপাদন কমে যায়। জানা যায়, এক বছর আগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে বানার নদ পুনঃখনন করা হয় এবং নদের দুই পাশে পার বানানো হয়। এখন ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদের দুই পারের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটখোলায়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নদের অন্তত আটটি জায়গায় সাত-আট মাস ধরে এভাবে পারের মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় প্রশাসন থেকেও তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। একই ধরনের খবর পাওয়া যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটসহ আরো অনেক এলাকা থেকে। খোয়াই নদের দুই পারে গড়ে উঠেছে মাটি বিক্রির হাট। এমনভাবে নদ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে যে নদের তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধটিও হুমকিতে রয়েছে।
জানা যায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বানার নদের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। ভাঙন রোধে নদের পারগুলো প্রশস্ত ও উঁচু করে বানানো হয়েছিল। অব্যাহত মাটি কাটার কারণে সেই পারগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। প্রতি রাতে খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ডাম্প ট্রাক ও লরিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইলসহ বিভিন্ন এলাকার ইটখোলায়। এই মাটি কাটা রোধ করা না গেলে আগামী বর্ষায় পারগুলো ধসে পড়বে এবং স্থানীয় মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। শুধু পারের মাটি নয়, সারা দেশেই অবৈধভাবে নদীর মাটি ও বালু উত্তোলনের ব্যবসা রমরমা। অভিযোগ আছে, অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই চলে এই অবৈধ ব্যবসা।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ সেকেলে পদ্ধতির ইটখোলা। এগুলোর দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। এর বদলে ইট তৈরির নতুন ও পরিবেশবান্ধব অনেক পদ্ধতি এসেছে। পরিবেশের স্বার্থে অবৈধ ইটখোলা ও অবৈধ মাটি কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই কাম্য।