প্রতিদিন শতাধিক ছোট বড় নৌকা চালতো,জেলেরা খড়া জাল দিয়ে মাছ ধরতো, ছেলেরা সাঁতড়াতো,কৃষকেরা নাইল্লা গাছের বুড়া নিয়ে যাইত, বর্ষার সময় গ্রামবাসী গোসল ও গুকনো মৌসুমে খালের পানি দিয়ে কৃষি জমি চাষ করতো,খালগুলো ছিলো এই এলাকার ঐতিহ্য ও সম্পদ,কালের চক্রে খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও অপরিকল্পিত রাস্তা তৈরি এবং পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে নিচিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। দুটি খালের উপর সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজগুলো ময়লা আর্বজনার কাছে জিম্মি অবস্থায় থেকে হয়ে যাচ্ছে অকেজো। কথাগুলো বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ বাসিন্দা মো. শাহ আলম মিয়া।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ ও মাঝিকাড়া গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা দুটি খাল দিয়ে গত কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন ছোট-বড় নৌকা মাধ্যমে নবীনগর সদরে বিভিন্ন মামলামাল নিয়ে আসা-যাওয়া করতেন। আলীয়াবাদ খালটি বুড়ি নদী থেকে শুরু হয়ে ভাঁটা নদীতে গিয়ে শেষ হয়েছিলো, আর মাঝিকাড়া খালটি বুড়ি নদী থেকে শুরু হয়ে আলীয়াবাদ বিলে গিয়ে মিশেছে। বর্তমানে দুটি খালই অবৈধ দখল ও পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে মরা ড্রেইনে পরিনত হয়েছে। খালের মধ্যেই স্থাপনা তৈরি করে অবাধে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। খালের প্রধান মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে জলাবদ্বতা সৃস্টি হয়ে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত ,দেখা দিচ্ছে নানান রোগ বালাই। গত কয়েক বছর আগে আলীয়বাদ পশ্চিম পাড়ার ব্রীজের নিচ দিয়ে পৌরসভার একটি মাটির রাস্তা নেওয়ার কারণে খালের মুখটি বন্ধ হয়ে ভাঁটা নদীর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পূর্ব অংশে বুড়ি নদীর সাথেও সংযোগ বন্ধ হয়ে খালটি অনেকটা ভড়াট হয়ে গেছে। ফলে খালের নিচু জায়গাগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলেই তৈরি হয় জলাবদ্বতা,পানি নষ্ট হয়ে গেছে, ছড়াচ্ছে র্দূগন্ধ, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ দেখা দিচ্ছে নানান রোগ জীবানো। এই খালের উপর গত বছর সওজের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি ব্যয়েএকটি ব্রীজ তৈরি করা হয়, খালের মুখ বন্ধ থাকায় কাজে আসছেনা ব্রীজ।
অপর দিকে মাঝিকাড়ার গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা খালটি শুকিয়ে পানিশূন্য। একসময় এই খালের পাড়ে নবীনগর সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পাশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শতশত ছোট বড় নৌকা জমায়েত হতো। বর্তমানে ওই খালের উপর আরসিসি পিলার দিয়ে তৈরি করে করা হচ্ছে স্থাপনা। ফলে এই খাল দিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বুড়ি নদীর সাথে পানি চলাচলের জন্য ওই খালের পূর্ব পাশে খাদ্য গুদামের সামনে গত বছর প্রায় ১কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কালভার্টের মুখের অংশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলার কারণে খালের মুখটি বন্ধ হয়ে একটি ড্রেইনে পরিনত হয়েছে। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই এখানে খালের অস্তিত আছে।
স্থানীয়রা জানান, গায়ের জোর খাটিয়ে খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে ভূমিখেকোরা। পৌরসভার ময়লা আর্বজনা ফেলার কারণে খালের মুখ বন্ধ হওয়াতে বর্ষা মৌসুমে আমাদের বসতবাড়িসহ চাষের জমির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। তারা আরও বলেন, পৌর সদরে অবস্থিত প্রশাসনের চোখের সামনে খালগুলো বিভিন্নভাবে বিলিন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু খালগুলো উদ্ধারে প্রশাসনের নেই কোন তৎপরতা।
আলীয়াবাদ পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, এই খাল আমাদের জন্য মারণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। খালের দুটি মুখ বন্ধ থাকায় খালের নিচু জায়গাতে জলাবদ্বতা সৃস্টি হয়ে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে,পরিবেশ হচ্ছে দূষিত ,দেখা দিচ্ছে নানান রোগ বালাই। অবিলম্বে খালটি উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে দাবী করছি।
আলীয়াবাদ ও মাঝিকাড়া গ্রামের খালগুলো অবিলম্বে উদ্ধার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ পানি চলাচলের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবী উঠেছে নবীনগর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়। গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নবীনগর প্রেসক্লাব সভাপতি জালাল উদ্দিন মনির এ বিষয়টি কমিটির নজরে নিয়ে আসেন।
সভায় নবীনগর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাস বলেন,দুটি খালই গুরুত্বপূর্ণ, খালগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করছি, আগামী বর্ষার আগেই খালগুলোর মুখ পরিস্কার করা করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোশারফ হোসাইন বলেন, সরকারি জায়গা দখলকারী সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ সরকারি জায়গা বা সরকারি খাল দখল করার চেষ্টা করলে আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।