ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন গৃহ ও ভূমিহীন মর্জিনা বেগম। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি কুড়িগ্রামের নাগেশ^রী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের ধনীগাগলা বিন্নাবাড়ী গ্রামের মৃত্য আছর উদ্দিনের মেয়ে। কঠিন রোগে বঞ্চণার শিকার হয়েও বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। তবুও তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোন প্রকার ভাতা। গৃহ ও ভূমিহীন হলেও পায়নি থাকার জন্য সরকারি ঘর প্রায় ২০ বছর আগে সংসারের অভাবের তারণায় ঝিয়ের কাজ করতেন ঢাকায়। সেখানেই পরিচয়ের পর একসময় বিয়ে হয় ভোলা জেলার চর ফ্যাশন উপজেলার ওমরপুর গ্রামের আনছল হকের সাথে। আনছল হক ওই সময় ঢাকায় রিকশা চালাতেন। বিবাহিত জীবনে তাদের সংসারে মর্জিনা এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। একসময় মর্জিনা বেগমের হাঁটুতে প্রথমে টিউমার ধরা পড়ে। টিউমারের চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে আবারও ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলে জানতে পারেন বিবি রোগ। সে চিকিৎসায়ও মেলেনি প্রতকার। পরে ২০১৪ সালের দিকে ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডান পায়ের হাঁটুর হাড়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর চিকিৎসাভার মেটানো সম্ভব ছিলোনা তার স্বামীর। এর মধ্যে ২০১৬সালে স্বামী অনছল দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। স্ত্রীসহ ২ সন্তানের খোঁজখরব রাখেননি তিনি। পরে অসহায় হয়ে ২ সন্তান নিয়ে ঢাকা ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন মর্জিনা। বাপের বাড়ি বলতে অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা বৃদ্ধা বিধবা মা। সেখানেই আশ্রয় নেন মর্জিনা। গেলো সাড়ে ৩ বছর আগে হঠাৎ হোচঁট খেয়ে পড়ে গেলে চলাচলের ক্ষমতা হারান তিনি। কর্ম অক্ষম মর্জিনার বড় ছেলে রাসেল (১৪) অন্যের দোকানে কাজ করে মাসে ৫শ টাকা পায়। সেটা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। মেয়ে রাশেদা খাতুন (১২) পঞ্চম শ্রেশির শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি আশ্রিতের বাড়িতে কাজ করে আর মায়ের দেখাশোনা করে। হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যান এখানে সেখানে। অর্থাভাবে মর্জিনার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে এখন। তাই স্থায়ী চিকিৎসা ও মাথাগোঁজার ঠাঁই পেতে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার আকুতি জানান মর্জিনা।
স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি বড় অসহায়। ছেলের ৫শ টাকায় কোনোমতে তাদের সংসার চলে। অন্যের বাড়িতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার। স্থানীয়রা প্রতি মৌসুমে কিছু ধান চাল সংগ্রহ করে তাদেরকে সহযোগিতা করেলেও তা দিয়ে কিছুই হয় না। মর্জিনার অসহায়ত্বের স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
মেয়ে রাশেদা খাতুন জানায়, তার মা যেভাবে কষ্ট করেন এটা তার ভালো লাগে না। সে চায় তার মা সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক। মা সুস্থ থাকলে তারাও ভালো থাকতে পারবে। পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবে।
মর্জিনার মা কদরজান (৭০) জানান, তিনি নিজেই অন্যের বাড়িতে থাকেন। তিনিও চলাফেরা করতে পারেন না। এর মধ্যে মেয়ে পঙ্গুপ্রায়। তাকে টেনে নিয়ে বেড়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই তার।
এদিকে জাতীয় পচিয়পত্রে স্বামীর বাড়ির ঠিকানা থাকায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছে না মর্জিনা বেগম। অভিযোগ জাতীয় পচিয়পত্র সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ঘুরলেও মিলছে না প্রতিকার।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে এতদিন সংশোধনের কাজ করা সম্ভব হয়নি। ওনার আবেদনের সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে আসলে দ্রুত সংশোধন করে দেয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সালেকুল ইসলাম বলেন, তাকে এর আগে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। এছাড়াও তার ঔষধপত্র আমরা কিনে দেব বলেছি। আর জাতীয় পচিয়পত্র সংশোধন হলে তাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় আনা হবে।