আজ সেই ভয়াল ৩ মার্চ। দশ বছরেও শেষ হয়নি বগুড়ার নন্দীগ্রামে ৩ মার্চের নারকীয় তান্ডবের বিচার কাজ। মানবতা বিরোধী অপরাধে আমৃত্য দন্ডিত জামায়াত নেতা ‘মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে’ এই গুজব রুটিয়ে তার মুক্তির দাবীতে হাজার হাজার লোককে রাস্তায় নামিয়ে তান্ডব চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছিল বগুড়ার নন্দীগ্রাম। সেই ভয়াবহ তান্ডবের দশম বর্ষপূতি আজ। এই তান্ডব থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, দোকানপাট, অফিস-আদালত, থানা কোন কিছুই।
জানা গেছে, দালানকোঠা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষত চিহ্নের দাগ মুছে গেলেও ২০১৩ সালের ৩ মার্চের ভয়াবহতার স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককেই। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ভোরে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে এমন পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়। এরপর তাকে রক্ষার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা উপজেলায় একযোগে চালায় তান্ডব। মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে উপজেলা পরিষদ, থানাসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় তারা। সে দিনের ভয়াবহতার কথা মনে হলেই এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকে। এখনো ক্ষতিগ্রস্থ ভবনের ক্ষত যেন মনে করিয়ে দেয় সেদিনের সেই বিভীষিকার কথা। কতোটা নিষ্ঠুরতার সাথে এই ধরনের একটি হামলা চালনো সম্ভব সেই কথাই ঘুরেফিরে এখনো আসছে সাধারন মানুষের আলোচনায়।
স্মরণকালের ভয়াবহ সেই ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ৬৪৪ জনকে অভিযুক্ত করে ৪ টি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেই সাথে উপজেলা পরিষদ নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকা ব্যয়ে ছয়তলা (৬তলা) বিশিষ্ট ৪র্থতলা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। পাশাপাশি পাল্টে গেছে পরিষদের ধ্বংসযজ্ঞ চিত্র।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা স্টাফ কোয়াটারের মুয়াজ্জিন আবদুল জলিল বলেন, ওই ঘটনার কথা আমার এখনও মনে পড়ে। ওই আতঙ্ক কোনোদিন ভুলব না। এইসব ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো দুর্বৃত্তর সাজা হওয়ার কথা শোনা যায়নি। মামলাগুলোর কি অবস্থা তাও জানিনা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মামলার বাদী রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, ‘দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে’ এমন গুজব রুটিয়ে আমার বাড়িতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করে। বর্তমানে আমার স্বাক্ষী শেষ হয়েছে।
নন্দীগ্রাম থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আলী জানান, মাওলানা সাইদীকে চাঁদে দেখা সংক্রান্ত নাশকতা মামলা তদন্তশেষে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। সেইসব মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।