নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক ব্যবসায়ি বন্ধুকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজের বসতবাড়ী হারিয়ে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে পরোপকারী বন্ধু। শুধু বন্ধুত্বের কারণে নিজের ভিটেমাটি ব্যাংকে জামানত দিয়ে বন্ধুকে সাহায্যের হাত বাড়ান। অথচ সেই বন্ধু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। জামিনদার থাকায় বন্ধুত্বের খেসারত দিতে হল বসতবাড়ি। এটি ঘটে পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড নতুন বাবুপাড়ায়। ওই এলাকার বাসিন্দা শেখ ওসমান গনির বন্ধু তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় সে এখন বসতবাড়ি হারিয়ে একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন।
সরল মনা বন্ধুর সাথে প্রতারণা করেন শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বাঁশবাড়ি আমিন মোড়ের বাসিন্দা মৃত নাজির উদ্দিনের ছেলে মো. সিরাজ (৫৫)।
পেশা ছিল টিনের সামগ্রী তৈরির ব্যবসা। ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ২০১১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা সিসি ঋণ গ্রহণ করে। এ ঋণের জন্য তার ঘনিষ্ট বন্ধু ওসমান গনি তার ৪ ভাই ও ৬ বোনের অংশিদারীত্বের একমাত্র ৮ শতকের বসতভিটার মূল দলিল জামিনদার হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখেন। বন্ধুর উপকারের কথা ভেবে ওসমান গনি লিখিত অঙ্গীকারনামার শর্তে ঋণ গ্রহণকালে ব্যাংকের শর্তাদি সমূহ মেনে স্বাক্ষর করেন। ব্যাংক থেকে জানা যায় ঋণ গ্রহণের পর তা আর পরিশোধ করা হয়নি। বার বার পরিশোধের তাগাদা দেয়া হলেও গ্রহিতা ব্যাংকে যোগাযোগ করেনি। ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে নীলফামারী অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে ঋণগ্রহীতা সিরাজ মামলায় হেরে যান।পরে জেলা দায়রা জজ আদালতে ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে ২২ লাখ টাকার একটি চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করেন। তবে এ মামলায় ঋণগ্রহীতা জয়ী হন এবং তাকে নির্দোষ খালাস দেয়া হয়। রায় পেলেও আত্মগোপন করেন সিরাজ। বন্ধুর ঋণের জন্য ব্যাংকে রক্ষিত ওসমান গনির বসতভিটাটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজ নামে দলিল করেন। দীর্ঘ ৭ বছর ঋণগ্রহীতা পলাতক থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিনদারকে টাকা পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করেন। ব্যাংকের চক্রহারে বৃদ্ধি ঋণের চাকা ঘুরতে ঘুরতে বিশাল অংকে পরিণত হয়। এত টাকা তিনি কিভাবে আর কেনই বা দেবেন এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় কাটে তার দিন।
এদিকে, ঋণের টাকা আদায়ে সৈয়দপুর ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নীলফামারী অর্থ ঋণ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত জামিনদারের বাড়িটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ সৈয়দপুর সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান, কোর্ট কমিশনার সাইদুল রহমান, নাজির ভরদ চন্দ্রসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন শেখ ওসমান গনির বাড়িটি দখল বুঝে দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।
শেখ ওসমান গনি বলেন, বন্ধুত্বের খেসারতে বাড়ি-ঘর হারাতে হবে তা জানা ছিল না। এখন ৪ পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাবো, ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছি না। এ দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে তাই বিত্তশালীসহ সরকারের সহয়তা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মাহাবুব পারভেজ বলেন, কাউকে নিঃস্ব করা ব্যাংকের কাজ নয়। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তারা ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ রাখেননি। তারা যোগাযোগ রাখলে হয়তো কোন একটা উপায় বের করা যেত। বন্ধুর জন্য তিনি কি করেছেন সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যাংক তার প্রাপ্য বুঝে পেয়েছেন।