বাবাকে ছাড়িয়ে গেছেন মেয়ে। তাও একই বিভাগে চাকুরি। বাবা মিজানুর রহমান হাসপাতালের সহকারি সেবক। মেয়ে তানজিনা আক্তার সদ্য চিকিৎসক হয়েছেন। যোগ দিয়েছেন হাসপাতালে। মেয়ের এমন সফলতাকে বেশ উপভোগ করছেন পরিবারের সদস্যরাও। তানজিনার এ সাফল্যে সবাই খুশি।
কাকতালীয় বিষয় হলো, বাবা ও মেয়ে দু’জনই একই তারিখে অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন। দু’জনের ক্ষেত্রেই দিনটি ছিলো সোমবার। ১৯৯৪ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া বাবা শেখ মো. মিজানুর রহমান বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। মেয়ে তানজিনা এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারি সার্জন পদে যোগ দিয়েছেন। তানজিনা আক্তার কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ও ৪২তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হন।
শেখ মিজানুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতি গ্রামে। মিজানুর রহমানের তিন সন্তানের মধ্যে তানজিনা সবার বড়। মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় মেয়ে মিরাজ আক্তার ফার্মাসীতে মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ও ছোট ছেলে শেখ মিনহাজুর রহমান রহমান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছেন। মিজানুর রহমান বর্তমানে কসবায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই পড়ার প্রতি আমার মেয়ের আগ্রহ ছিলো। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা বলতো সে। কিন্তু সরকারি কলেজে সুযোগ না পেলে আমার পক্ষে পড়ানো সম্ভব হবে না বলে তাকে বলতাম। সে তার চেষ্টায় সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়ে এগিয়ে যায়। মেয়ের এ সাফল্যে এখন আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বিভাগেই সে আমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি অন্যরকম অনুভূতি হয়।’
তানজিনা আক্তার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বাবার চাকরির সুবাদে হাসপাতালের কোয়াটারে থাকার সময় দেখেছি যে মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন চিকিৎসককে বেশি বিশ্বাস করে। মানুষকে সেবা করার পেশা থাকলেও চিকিৎসা সেবাকেই আমার সেরা মনে হয়েছে। চিকিৎসক হওয়ার ক্ষেত্রে আমার মা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বেশি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাবা মা চায় তার ছেলে মেয়ে কর্মক্ষেত্রে তাকে ছাড়িয়ে যাক। আমার বাবা মায়েরও তাই ইচ্ছে ছিলো। ‘প্রতিবন্ধকতা দূর করে আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে আমার বাবা মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে মহান আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।’
কখনো যদি একই হাসপাতালে চাকরি করেন তখন বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নাকি পদস্থ-অধীনস্থ সম্পর্ক বজায় রাখবেন এমন প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক তানজিনা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো ক্ষেত্রে অবশ্যই বাবা মেয়ের সম্পর্ক বজায় রাখবো।’ পরিশ্রম ও ভাগ্যের বিশ্বাস করে সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তানজিনা আক্তার। বর মো. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সহকারি পরিচালক। মিজানুর রহমানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামে। মিজানুর রহমানের এক মামার মধ্যস্থতায় দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়।
ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেবক বাবার চিকিৎসক মেয়ে হওয়ার বিষয়টি আমি বেশ উপভোগ করছি। আমি মনে করি সমাজের জন্য এটি একটি উদাহরণ। নিজ নিজ জায়গা থেকে বাবা ও মেয়ে সফল বলে আমি মনে করি। গর্বিত পিতার গর্বিত সন্তান হলো আমার স্ত্রী।’
কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরূপ কুমার পাল বলেন, ‘একজন বাবার একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা থাকলে তিনি যে চাকরিই করেন না কেন তার সন্তানরা যেন বড় জায়গায় যেতে পারে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে এটা। বিষয়টি জেনে আমার খুব ভালো লেগেছে।’