নীলফামারী জেলার ৫ উপজেলার সরকারী হাসপাতালে চলছে চিকিৎসক সংকট। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও সমাধানে নেই কোন উদ্যোগ।
জেলার ডোমার,ডিমলা,কিশোরগঞ্জ,জলঢাকা, নীলফামারী সদর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট দেখা দেয়। জনবল সংকটের বোঝা মাথায় নিয়ে সারা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। প্রয়োজন অনুসারে নেই চিকিৎসা, নেই পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা। ৫ উপজেলায় কাগজপত্রে ১৯০ জন চিকিৎসক থাকলেও আছে মাত্র ৫২ জন।
নার্স ৪৬৩ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১৯৪ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী কাগজপত্রে ৫৫৭ জনের মধ্যে আছে ২০৮ জন। চতুর্থ শ্রেণী ৩৫৭ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১০৭ জন।
নীলফামারী সদর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কাগজপত্রে ৫৭ জনের মধ্যে ১৬ জন চিকিৎসক কর্মরত আছে। নার্স মঞ্জুরিতকৃত ১৪৯ জনের মধ্যে রয়েছে ৯০ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ১৬৫ জনের মধ্যে রয়েছে ১১০ জন। চতুর্থ শ্রেণী ১২০ জনের মধ্যে রয়েছে ৫০ জন।
রোগিদের পরীক্ষার মেশিন ৩৯টির মধ্যে ১৮টি অচল। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি,এতে সঠিক রোগনির্ণয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ জেলার মানুষ। পরীক্ষার জন্য যেতে হয় মোটা অংকের টাকা দিয়ে বেসরকারী ক্লিনিক বা ডায়াগনোষ্টিক প্যাথলজিতে।
এদিকে দালালের খপ্পরের খাঁচায় বন্দি এই হাসপাতালের রোগি ও স্বজনেরা। রোগি আসলেই দৌঁড়ঝাপ শুরু হয় কমিশন বানিজ্যের দালাল চক্রের। হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নের ভুক্তভোগি মনোরঞ্জন রায় অভিযোগ করে বলেন,পায়ের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাই। দাঁড় হলেই আমাকে নিয়ে টানা হেঁচরা শুরু করেন দালালেরা, বলেন এখানে চিকিৎসা ভালো হবে না,আমাদের সাথে চলেন বাহিরে ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চেম্বারে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দিবো। টুপামারী ইউনিয়নের রোগি মিলন মিয়া বলেন, আমার কোমড়ের ব্যথা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই,ডাক্তার পরীক্ষা দিয়ে বলেন বাহিরে ডায়াগনোষ্টিক ও প্যাথলজিতে পরীক্ষা করতে হবে,আমি গরীব মানুষ মনে হয় পরীক্ষার অভাবে আমার মরতে হবে। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারী দীপঙ্কর বর্ম্মন অভিযোগ করে বলেন, এই হাসপাতালে কমিশন বানিজ্যের ব্যবসা রমরমা ভাবে চলছে। গর্ভবতী রোগি হাসপাতালে আসলেই ডাক্তার,নার্স,অন্যান্য কর্মচারীর যোগসাজসে দালালেরা হাসপাতালে ভর্তি না করে বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করেন। সেখানে তারা কমিশন পান,সেই কমিশন পরে ভাগবাটোয়ারা হয়। এসব দেখে আমার গা জ¦লে যায়, হাসপাতালে চাকুরী করি বিধায় কিছু বলতে পারিনা। তাই আপনারা এগুলো অনিয়ম দুর্নীতি পএিকায় তুলে ধরবেন। জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.মো.মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন,দালাল চক্রের বিষয়টি আমার জানা নেই,আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।
ডোমারে ৫০ শয্যা বশিষ্টি উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে। এখানেও কাগজপত্রে ৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৮ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। নার্স ৩১ জনের মধ্যে আছে ৩০ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৯৬ জনের মধ্যে রয়েছে ৬০ জন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৩৫ জনের মধ্যে রয়েছে ১৬ জন। প্যাথলজি চালু থাকলেও নেই একযুগ থেকে পরীক্ষার জন্য আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন। আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটু সামনেই নিজের চেম্বারে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন বসিয়ে ভিজিট নিয়ে রোগির ব্যবস্থাপত্র দেন ও পরীক্ষা করেন ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা: কর্মকর্তা ডা:মো:রায়হান বারী। ভুক্তভোগি জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের বেতগাড়া গ্রামের রোগির স্বজন রুমানা আক্তার ও বিলকিছ বেগম বলেন,আমার বোন গোলাপি বেগম শরীর ফুলা নিয়ে ভর্তি ছিল,ভালো মানের চিকিৎসা নেই ও পরীক্ষার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় দিশেহারা হয়ে রোগি নিয়ে চলে যাচ্ছি রংপুরে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্কপনা কর্মকর্তা ডা:মো:রায়হান বারীর সাথে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আল্টাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট,বারবার ঠিক করলেও ঠিক হয়না। রোগির চাহিদার কারণে আমি ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগি দেখি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করি।
ডিমলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্টি উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে। কাগজপত্রে ১৪ জন চিকিৎসকের জায়গায় আছে ৬ জন। ৩৫ জনের মধ্যে রয়েছে ২৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ২৬ জনের মধ্যে রয়েছে ১০ জন। চর্তুথ শ্রেণীর ২৮ জনের মধ্যে রয়েছে ১০ জন। র্সাজারী, অ্যানেস্থসিয়া ও গাইনী ডাক্তার না থাকায় ও অপারশেন থিয়েটাররে দুটি অ্যানসেথশেষ্টিয়া মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ায় চালু নেই অপারশেন থয়িটোর, বন্ধ রয়েেছ সজিারষ্টিয়ান অপারেশনসহ জটিল অপারেশন।সরেজমিনে গিয়ে রোগির স্বজন বালাপাড়া ইউনিয়নের আবদুল হামিদ ও রোকসানা বেগমের সাথে কথা হলে তারা বলেন, হামার দু:খের কথা কাক কমো। এটে অনিয়ম দিয়ে ভর্তি। চিকিৎসা করিবার জন্য আসলেই কয় পরীক্ষা নাই, চিকিৎসা নাই। খালি যাবার কয় অংপুর হাসপাতাল বা বেসরকারী ক্লিনিক ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারোত। এই উপজেলার রোগিরা চিকিৎসার অভাবে অনেকে মরি যায়। উপজলো স্বাস্থ্য ও পরবিার পরকিল্পনা র্কমর্কতা ডা. সারোয়ার আলম জানান,অনিয়মের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ব্যাপক জনবল ঘাটতির কারণে চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হয়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল। সীমিত জনবল দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।কাগজপত্রে ২০ জন চিকিৎসকের স্থানে রয়েছে ৬ জন চিকিৎসক। নার্স ২৪ জনের মধ্যে আছে ২৩ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৩০ জনের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন। চতুর্থ শ্রেণীর ৩৩ জনের মধ্যে রয়েছে ১৪ জন। অপারেশন থিয়েটার চালু নেই,রোগ পরীক্ষার জন্য এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য মেশিন থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান। পরীক্ষার জন্য যেতে হয় বেসরকারী ক্লিনিক,ডায়াগনোষ্টিক ও প্যাথলজিতে। ভুক্তভোগি রোগির স্বজন পুটিমারী ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বলেন, দুইদিন থেকে বুকে ব্যথা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সরে ডাক্তার দেখাই, পরীক্ষার জন্য বাহিরের ডায়াগনোষ্টিকে পাঠায় সেখানে ১ হাজার ২শ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করি, ভোগান্তির আরেক নাম কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা:কর্মকর্তা ডা:আবু শফি মাহমুদ বলেন, জনবল সংকটের কারনণ রোগ নির্নয়ের মেশিন চালু করা যাচ্ছে না। তাই চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
জলঢাকা উপজেলার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মঞ্জুরিকৃত ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা আছে ৬ জন। নার্স ৩০ জনের মধ্যে রয়েছে ২৮ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মঞ্জুরিকৃত ৩২ জনের মধ্যে রয়েছে ১৩ জন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৩৪ জনের মধ্যে রয়েছে ১৭ জন।এক্সরে,আল্ট্রাসনোগ্রাম অন্যান্য পরীক্ষার মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান ও চিকিৎসক না থাকায় সব পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত এ উপজেলার রোগিরা। যে কোন রোগ নিয়ে আসলেই পাঠিয়ে দেন বেসরকারী ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ও ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে। স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে খুটামারা ইউনিয়নের রোগি মিসেস স্বপ্না রায় বলেন,জ¦র ও পেট ব্যথা নিয়ে দুইদিন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি, কোন ভালো ফল নেই। রোগি আসলেই রেফার্ট করেন রংপুর হাসপাতাল বা বেসরকারী ক্লিনিকে। মোটা টাকা দিয়ে বাহিরে অন্য কোথাও পরীক্ষা করতে হয়। দালালের খপ্পরে পরে রোগির স্বজনেরা রোগিকে নিয়ে বিভিন্ন বে-সরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দৌঁড়ঝাপ করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা:কর্মকর্তা ডা:এ এইচএম রেজওয়ানুল কবীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে অপারেশনের কোন ব্যবস্থা নেই। পরীক্ষার মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান ও রেডিওগ্রাফারের অভাবে রোগির পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সারা জেলার কর্মকর্তা কর্মচারীর শুন্যপদের জন্য উর্দ্ধতনের কাছে চাহিদা দেয়া আছে। তবে জরুরী ভিত্তিতে এসব সমস্যা সমাধান হবে। অনিয়ম সম্পর্কে আমার জানা নেই, কোথাও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নিবো।