বাগেরহাটের মোল্লাহাটে প্রতি পক্ষকে ফাসাতে অসুস্থ বৃদ্ধ ইউসুফ শেখ (৭০)’কে গলা কেটে হত্যা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় পুলিশের বিরুদ্ধে আসামীদের প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। প্রথমে পরিকল্পিত হত্যা করে প্রতি পক্ষের ৭২ জনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সীমাহীন হয়রানী ও পরবর্তীতে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে আসামীদের প্রকাশ্য যড়যন্ত্রের ঘটনায় হতবাক হয়েছেন সচেতন মহল ও স্থানিয়রা।
তথ্যানুসন্ধানীতে জানাযায়, উপজেলার হাড়িদাহ গ্রামে স্থানীয় আধিপত্ত বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে। যার ফলে প্রায়ই হামলা-প্রতিহামলা ও সংঘর্ষে যখম এবং উভয় পক্ষের বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে একাধিক সালিশ বৈঠক ও মামলা হয়। একপর্যায়ে প্রতি পক্ষকে ঘায়েল করতে/ফাসাতে নিজেদের এক জনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। এজন্য দিন-তারিখ ঠিক ও শিকার হিসেবে নিজ দলিয় রিপন শেখকে নির্ধারন করা হয়। ঘটনার পূর্বে বিষয়টি জানতে পেরে নির্ধারিত ব্যক্তি প্রাণের ভয়ে নিজেকে আড়াল করেন। যদিও শিকার নাগালের বাহিরে যায়, তবু ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ওই রাতেই গত ১৪ মে ২১ ইং শুক্রবার (ঈদ রাতে) সাড়ে ৩ টার দিকে নতুন শিকার হিসেবে অসুস্থ বয়বৃদ্ধ ইউসুফ শেখ’কে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর পূর্ব-পরিকল্পণা অনুযায়ী প্রতিপক্ষের ৭২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। এ ছাড়া ওই জঘন্যতম হত্যাকারীদের মাঝে রেজাউল শেখ (৩৯), রেজাউল করিম মোল্লা (৩২), মোস্তাক শেখ (৪০), উজ্জ্বল শেখ (২৯), সাইফুল ইসলাম ওরফে ইকবাল (৩৫), মোঃ ইমদাদ মোল্লা (৫১) ও তাইজুল মোল্লা (১৯) সহ ১৭ জনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ওই সকল হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতারা পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করছে। ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে মিথ্যা মামলা দায়েরের অপততপরতা চালাচ্ছে। যা নিয়ে এখন এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সচেতন ও স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা বলছেন, জঘন্যতম হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছে, তাদের যারা মদদ দিচ্ছে, তারা অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এহেন ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া দরকার। অন্যথায় এদের জন্য গোটা সমাজ অশান্তির আগুনে পুড়বে।
মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিকরুল আলম মিয়া বলেন, যে খানেই কোন ধরনের অন্যায় হয়, সেখানে তাতক্ষণিক ওসি সাহেব তার টিম নিয়ে হাজির হণ, সঠিক/ভালো কাজ করতে গিয়ে যদি বাধার সম্মুখিন হতে হয়, তা হলে ভালো/সঠিক কাজ করবে কি ভাবে ? এমন ভালো অফিসারের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের ধিক্কার জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট ৭ নং আটজুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের হাড়িদাহ গ্রামের কিছু দুস্কৃতিকারী ইউসুফ শেখের গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পর তাদের প্রতি পক্ষের ৭২ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশের তদন্তে আসল রহস্য বেরিয়ে আসে, হত্যা মামলার বাদীরাই হত্যা করে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই এবং দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করি।
মোল্লাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ জানান, সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ ও যথাযথ তদন্তে এবং হত্যাকারীদের স্বিকারোক্তিতে পুলিশ নিশ্চিত যে, ওই মামলার বাদী পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ন্যক্কার জনক এ হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে। তিনি আরো জানান তদন্তে যে, সকল বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো ঃ
১। ভিকটিম ইউসুফ শেখের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও সুরতহাল প্রতিবেদনে গলায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা কাটা ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন নাই। অথচ এজাহারে বলা হয়েছে তাকে কয়েক জনে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেছে (অসামাঞ্জস্য)।
২। মামলার ঘটনাস্থলটি একটি ছোট টিনশেড, টিনের বেড়া যুক্ত কাচারি ঘর, লম্বা ১২ ফুট এবং চওড়া ৭ ফুট ৯ ইঞ্চি ঘরের মধ্যে ৫/৭ ফুট কাঠের একটি খাট ও ৮ বস্তা ধান রাখার পরও কিভাবে এজাহারনামীয় ৭২ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৮ জন লোকের আগমন (সন্দেহজনক)।
৩। ভিকটিম একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার পরও তাকে ৭২/৮০ জন আসামি মিলে হত্যা করে বলিয়া বাদী এজাহারে উল্লেখ করে কিন্তু অন্য কাউকে আঘাত টুকু করিল না (সন্দেহজনক)।
৪। ভিকটিমের চারজন ছেলে ও স্ত্রী থাকা সত্তেও কেউ বাদী না হয়ে সংসার ভিন্ন ভাইপো মামলার বাদী হওয়ার কারণ (সন্দেহজনক)।
৫। মামলার ঘটনার সময় গভীর রাত্র হওয়া সত্তেও বাদী/সাক্ষী গণ এজাহারনামীয় ৭২ জন’কে রাতের আঁধারে কিভাবে চিনলো তাহা জিজ্ঞাসাবাদ।
৬। হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার।
৭। সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ পলাতক আসামিদের অবস্থান নির্ণয় ও গ্রেফতার মামলার মূল রহস্য উদঘাটন।
৮। জেলগেটে আসামিদের দেওয়া প্রদত্ত তথ্য যাচাই বাছাই।
৯। ঘটনার সময় ওই ঘটনার আগে পরে আসামিদের কথোপকথনের কল লিস্ট ও আসামিদের নিজেদের দেওয়া বক্তব্যের অসামঞ্জস্যতা।
১০। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।