কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ নয়াপাড়া গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধী তালাকপ্রাপ্তা রুনা আক্তার ভালো নেই। সুখের জন্য বিয়ের পিড়িতে বসেও সংসার করা হলো না,কপালে আর সুখ সইলো না। নিজে শারিরীক প্রতিবন্ধী, এরই মাঝে জন্মদেন এক কন্যা সন্তানের। ভাগ্য বিড়ম্বনা মানষিক নির্যাতনের শিকার রুনা এখন স্বামীর তালাকপ্রাপ্তা হয়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। মা লাল বানু কন্যার অসহায়ত্বে বিলাপ করছেন সাথে কন্যাও মায়ের চোখে জল দেখে হু হু করে কেদেই যাচ্ছেন। প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে এমন করুণ দৃশ্যটিই দেখা যায়।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ নয়াপাড়া গ্রামের রিকশা চালক মোতালিবের ঘরে শিশু রুনা আক্তার জন্ম লাভ করেন ২০০০ সালের ৩ অক্টোবর মাসে। জন্মের কয়েক বছর পর শিশুকালেই বাবা আবদুল মোতালিব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এতিম প্রতিবন্ধী শিশু রুনা লেখাপাড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছা। ফলে ৬ সদস্যের অতি দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা তাকে মহিনন্দ গোয়ালাপাড়া আনন্দ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু একটি হুইল চেয়ারের জন্য স্কুলে যেতে পারছিল না সে। ২০১৬ সালে রুনার এ করুণ কাহিনি ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন যুব উন্নয়ন পরিষদ কিশোরগঞ্জ এর সভাপতি আমিনুল হক সাদী, শফিক কবীর ও তানভির হায়দার ভূঁইয়া। বিষয়টি তৎকালীন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীলের নজওে আসলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি রুনা আক্তারকে একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন। রুনা আক্তার এলাকার গোয়ালাপাড়া আনন্দ স্কুলের ছাত্রী। সে তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছিলো। হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দে রুনার চোখে পানি এসে যায়। ফলে সে নিয়মিত স্কুলে যেতে ছিলো।
কিছু দিন যেতেই হুইল চেয়ারের পর মাসিক ভাতার ব্যবস্থা হলো প্রতিবন্ধী রুনার। রুনাকে হুইল চেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হলে ঘটনাটি পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৌমেন্দ্র লাল চন্দ এবং তার স্ত্রী শান্তা চন্দ এর নজরে আসে। রুনার পড়াশুনা বাবদ প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা প্রদান করেন। সৌমেন্দ্র লাল চন্দ দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সাইফুল হক মোল্লা দুলু এর মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল সাথে যোগাযোগ করেন। রুনার বাড়িতে যেয়ে তার হাতে প্রথম মাসের তিন হাজার টাকা তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী রুনার জন্য কিশোরগঞ্জ অগ্রনী ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দেন। টাকাগুলি সরাসরি ওই একাউন্টে জমা হতে থাকে। রুনাও আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও প্রতিবন্ধী ভাতা পেথে থাকেন। কিন্তু বাঁধ সাধে রুনার সফলতা। রুনার অভাবনীয় সফলতা দেখে তার সাথে প্রেমের সখ্যতা গড়ে তোলেন মাইজখাপন ইউনিয়নের মৃত হাবিবুর রহমানের পুত্র মোঃ কাইয়ুম ২৫। নানাভাবে ফুসলিয়ে প্ররোচিত করে শারিরিক প্রতিবন্ধী রুনাকে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে তিন লাখ টাকা দেন মোহর ধার্যে বিশ হাজার টাকা ওসল বাদে বিয়ে করেন। বিয়ের পর রুনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে যৌতুকের জন্য মানষিক চাপ প্রয়োগ করে। পরিবারের খোঁজ খবর নেয়না এবং রীতিমত ভরন পোষণ করেনি। ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে স্বামী কাইয়ুমকে এফিডেভিটমূলে তালাক দেন। সুখের সংসার বেধেও সুখ হলো না তার। স্বামীর ঘর ছেড়ে রুনা আশ্রিত হন মায়ের বাড়িতে। বর্তমানে তার অবস্থা ভালো নেই। একেতো শারিরীক প্রতিবন্ধী আরেক নিজের ওরষজাত কন্যাসন্তান নিয়ে আরও বিপাকে রয়েছেন।
মোছাঃ রুনা আক্তার বলেন, বিয়ের পর দেখি যে আমার স্বামীর স্বভাব চরিত্র ভালো না, আমার কোনো খোঁজ খবর নেয়না এবং ভরন পোষণ করে নাই। তাই আমি আমার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে আমার স্বামী কাইয়ুমকে এফিডেভিটমূলে তালাক দেই। বর্তমানে আমার অবস্থা ভালো নেই। একেতো শারিরীক প্রতিবন্ধী আরেক নিজের ওরষজাত কন্যাসন্তান নিয়ে বিপাকে রয়েছি। মায়ের ঘরে পরিবারের বোঝা হয়েই রয়ে গেলাম।
রুনার মাতা মোছাঃ লাল বানু বলেন, ভেবেছিলাম বিয়ের পর রুনার কিছুটা সুখ হবে। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার যেই সেই। হাজারো হলেও নিজের কন্যা তাই পরিবারের বোঝা হলেও মা হিসেবেতো কোথাও দুরে ঠেলে দিতে পারি না। কষ্ট করেই লালন পালন করে যাচ্ছি।
রুনার ভাই রিকশা চালক আওয়াল বলেন, পরিবারের তিন ভাই দু বোন মা এবং স্ত্রীর ভরণ পোষন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তার মধ্যে শারিরিক প্রতিবন্ধী রুনাও এখন তালাকপ্রাপ্তা। তাকেই বা আর কে বিয়ে করবে। পরিবারের বোঝা নিয়েই শরীরের কায়িক পরিশ্রম করে যতই রিকশার প্যাডেলে পা রাখি ততই যেনো গরীবের সংসারের চাকা ঘুরে। পরিবারের দু মুঠো অন্ন জোগার হয়।
৪নং মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদের নিকাহ রেজিষ্টার মাও. মোঃ মস্তোফা বলেন, এফিডেভিটমূলে বিয়ে এবং তালাক কোনটাই বৈধতা নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, রুনার জন্য অনেক মায়া লাগে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি তার জন্য। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের এবং বিত্তবানরা এগিয়ে এলে পরিবারটির দুঃখ ঘুচতো। শুধু তিনিই না এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীরও।
এ বিষয়ে রুনার স্বামী কাইয়ুমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।