বরগুনার তালতলী ইউএনও মোঃ কাওছার হোসেন এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা হয়েছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে অন্যের জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) আমতলী সহকারী জজ আদালতে এ মামলা করেন বদরুল আলম বাবুল নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ আতিকুল হক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওছার হোসেন ছাড়াও সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুণ'গো', সার্ভেয়ার ও বড় বড়বগী ইউনিয়নের তফসিলদারে বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। তালতলীতে সহকারী কমিশনার না থাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী ভূমি কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
জানা যায়, উপজেলা বড়বগি মৌজার ৩৯৯৩ ও ৪০০০ দাগের ৪ একর কৃষি জমি ১৯৬৪-৬৫ সালে মৌলবী লতিফ ও সিদ্দিকুর রহমান কে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয় সরকার। পরে ১৯৮১ সালে ঔ স্থায়ী বন্দোবস্ত ও রেকর্ডিং জমি থেকে বদরুল আলম বাবুলসহ কয়েকজনের কাছে ২ একর ৬৭ শতাংশ বিক্রি করেন তারা। প্রায় ৪১ বছর ভোগ দখলের পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তালতলী উপজেলা নির্বাহি অফিসার ওই জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করেন। কোন প্রকার নোটিশ ও উচ্ছেদের কাগজপত্র ছাড়াই প্রথমে রেকর্ডিং সম্পত্তি দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করেন। পরে গত ২৫ জানুয়ারি আমতলী সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলা নির্বাহি অফিসার সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন বদরুল আমল বাবুল গং। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের লিখিত নোটিশ অন্য তিনজন গ্রহণ করলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন তা গ্রহণ করেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঔ জমি দখল নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ভরাট করে। বিষয়টি বাদীপক্ষ আদালতকে জানান। আদালত ওই জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করে এবং মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে কোন প্রকার কাজ না করার জন্য আদেশ দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ শুরু করেন। পরে গত ৪ মার্চ আমতলী সহকারী জজ আদালতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওছার হোসেন ছাড়াও সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুণ'গো', সার্ভেয়ার ও তফসিলদারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে এ মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী বদরুল আলম বাবুল বলেন, আমাদের রেকর্ডিং সম্পত্তি ও সরকারি স্থায়ী বন্দোবস্তের জমিতে ইউএনও কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই দখল নিয়েছেন। এরপরে আশ্রায়ন প্রকল্প ঘর নির্মাণ শুরু করেন। বিষয়টি আদালতে মামলা করি। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সে আদেশ মানেননি। এজন্য তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা করা হয়েছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোঃ আতিকুল হক বলেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অফিসার মোঃ কাওছার হোসেন বলেন, যেখানে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে সরকারের ৩ একর ৩৬ শতাংশ জমি রয়েছে। আমরা সেই জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর তুলছি। আমাদের এ জমিতে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। আদালত থেকে আসা কারণ দর্শনোর নোটিশের জবাব দিয়েছি। আদালত অবমাননার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।