কিশোরগঞ্জ এর নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গৌবিন্দপুর গ্রামে আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত যোগীসিদ্ধা চন্দ্রনাথ গোসাইয়ের মন্দির, সমাধি ও যোগী সম্প্রদায়ের বিরাট আখড়া রয়েছে। এককালে এ আখড়াটি ছিল এ দেশের যোগী সম্প্রদায়ের বিখ্যাত কেন্দ্র। এখন এ আখড়াটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বিগত শতাব্দীতে এ আখড়া থেকে নাথ যোগীদের দুস্প্রাপ্র ধর্মিয় হাড়মালার হস্ত লিখিত পান্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছিল। শৈব, বুদ্ধ, তান্ত্রিক, সহজিয়া ও যোগী এ কয়টি ধর্মমতে সমন্বয়ে উদ্ভত ধর্মই নাথ ধর্ম। এ ধর্মের মূল হলো মানব দেহ। দেহেই বিশ^ব্রহ্মান্ডের ন্যায় ক্ষুদ্র রুপ বা অংশ। অপরিপক্ক দেহকে যোগ বা সাধনার দ্বারা পরিপক্ক করতে পারলে শিবত্ব বা অমরত্ব লাভ করা যায়। এই অমরত্ব লাভের সাধনার নামই যোগ। যোগ সাধন পন্থী সম্প্রদায়ের গুরু ছিলেন মিলনাথ। গুরুদের নামের শেষে নাথ থাকায় নাথ যোগী সম্প্রদায় নামে পরিচিত। সাধন পদ্ধতির ভিন্নতায় নাথ পন্থিরা নাথ যোগী, কাপালীযোগী ও অবধূতযোগী শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। সিদ্ধাছাড়া অন্যান্যরা গৃহী। সিদ্ধাযোগী ও যোগিনীরা বিশেষ ধরনের পরিচ্ছদ, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ও কালে কুন্ডল পড়ে লোকলয়ে ঘুরে বেড়াত এবং গোরক্ষনাথ গোপী চন্দ্রের সন্ন্যাস, নাথ গীতিকা, দোহা ইত্যাদি নাথ ধর্মের মাহাত্মা মূলক গান পরিবেশন করে বিখ্যালব্দ অন্নে জীবিকা লাভ করত। মধ্যযুগের উত্তর ও পূর্ব বাংলার নাথ ধর্মের প্রবল প্রভাব ও প্রসার কালে কিশোরগঞ্জ এর নিকলী থানার ষাইটধার ও মিঠাইমনের ঘাগড়া নাথ যোগীদের প্রধান পীঠ স্থানে পরিণত হয়েছিল। ফলে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অন্যান্য কারণে ষোড়শ শতাব্দীর দিকে নাথ ধর্ম বিলুপ্তির পথে গেলেও উল্লিখিত দুটি এলাকায় র্দীঘকাল পর্যন্ত এ সম্প্রদায়ীদের প্রভা প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন ছিল। আলোচিত যোগীসিদ্ধা চন্দ্রনাথ গোঁসাইর সঠিক কাল নির্নয় করা না গেলে তার প্রধান র্শীষ সিদ্ধাযোগী আদুরী নাথের কাল ধরে চন্দ্রনাথ কে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পাদের লোক বলে ধরে নেওয়া যায়। আখড়াটি বিরাট। মন্দিরের সুঊচ্চ চূড়া বহুদুর থেকে দেখা যায়।